দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার মাদারীপুর জেলায়। দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে, নোয়াখালী জেলায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। 

এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি, ৬৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস। অন্যদিকে রাজধানীর পল্টন থানায় এ হার ১ শতাংশ। তুলনামূলক এ অনুপাত বলে দেয় বৈষম্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের জেলা হিসেবে মাদারীপুরের নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ, ২০১৬ সালে প্রকাশিত দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী মাদারীপুর ছিল সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের জেলার মধ্যে তৃতীয়। ওই প্রতিবেদনে জেলাটিতে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছরের ব্যবধানে এ রকম উল্টো চিত্র মুদ্রণজনিত ত্রুটি কিনা– জানতে চাইলে বিবিএসের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে প্রকাশিত চিত্র সঠিক। তবে গত প্রতিবেদনে কিছু ত্রুটি থেকে থাকতে পারে। এ দুর্বল ভিত্তির কারণে তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন 
করেন বিবিএসের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর গুলশানের চেয়ে ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার কম। ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গুলশানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আবার রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্যের বাস মিরপুরে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এলাকার মধ্যে আদাবরে  ৯ দশমিক ৮, বাড্ডায় ৭, বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বাস করে। ঢাকা জেলার সামগ্রিক দরিদ্রের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর জাতীয় দরিদ্রের হার ১৯.

২ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্রের হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলে এ হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের আঞ্চলিক ম্যাপিংয়ে দেখা যায়, বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস বরিশালে, ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে এ হার সবচেয়ে কম, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম নোয়াখালীতে, ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মাদারীপুরে সবচেয়ে বেশি, ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। উপজেলা হিসেবে ডাসারে (মাদারীপুর) সবচেয়ে বেশি, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।

গত ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দারিদ্র্যের মানচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের সহযোগিতা নেওয়া হয় এতে। প্রতিবেদন তৈরিতে প্রযুক্তি সহযোগিতা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে ডব্লিউএফপি।

প্রতিবেদনে নতুন করে জাতীয় দারিদ্র্যের তথ্য দেওয়া হয়নি। বিবিএসের ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা  ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।

মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে– এমন ভোগ্যপণ্যের একটি তালিকার ভিত্তিতে বিবিএস জরিপ করে। মৌলিক চাহিদা পূরণ করার মতো আয় যারা করতে পারে না, তারা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকায় ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমন লসন পার্সমেন্ট বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এই মানচিত্র প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ভিত্তিতে সরকার বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির এলাকা এবং বরাদ্দ নির্ধারণ করবে। উন্নয়ন সহযোগীরাও প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে এ দেশে কার্যক্রমে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারবে।’ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবও প্রায় একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৈষম্যহীন উন্নয়ন পরিকল্পনা করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ব এস র ৬ দশম ক সবচ য় সবচ য

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে

দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্‌-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়
  • আইপিএলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর পরিকল্পনা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে