জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে সাইবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে হ্যাকাররা
Published: 5th, February 2025 GMT
বিভিন্ন দেশের হ্যাকাররা গুগলের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে বড় ধরনের সাইবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে গুগলের থ্রেট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ (জিটিআইজি)। গুগলের তথ্যমতে, অন্তত ২০টি দেশের হ্যাকার দল জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করছে, যার মধ্যে ইরান ও চীনের সাইবার অপরাধীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। যদিও এখন পর্যন্ত হ্যাকাররা জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে সরাসরি সাইবার হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেনি।
গুগলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যাকাররা মূলত নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা দুর্বলতা শনাক্ত, আক্রমণের কৌশল নির্ধারণ এবং হামলার পর দীর্ঘ সময় নিজেদের নেটওয়ার্কের পরিচয় গোপন রাখার জন্য জেমিনি চ্যাটবটের সহায়তা নিয়ে থাকে। ইরানের হ্যাকাররা এরই মধ্যে জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ওপর নজরদারি, ফিশিং আক্রমণের কৌশল তৈরিসহ ভুয়া তথ্য প্রচার করছে। এ ছাড়া তারা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিসংক্রান্ত গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত অনুবাদ ও ব্যাখ্যার কাজেও জেমিনি চ্যাটবটের সহায়তা নিয়ে থাকে।
চীনের হ্যাকাররা জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও সরকারি সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি করাসহ নিরাপত্তা দুর্বলতা শনাক্ত করে বিভিন্ন নেটওয়ার্কে প্রবেশ করছে। এমনকি তারা বর্তমানে মাইক্রোসফট এক্সচেঞ্জ সার্ভারে পাসওয়ার্ড হ্যাক করে প্রবেশের উপায় খুঁজেছে এবং কার্বন ব্ল্যাক ইডিআরের মতো সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যারকে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করার চেষ্টা করেছে।
গুগলের তথ্যমতে, বিভিন্ন দেশের হ্যাকাররা জেমিনির নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেদ করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু তারা সফল হয়নি। তবে ডিপসিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই মডেলগুলো সহজেই প্রম্পট ইনজেকশন আক্রমণের শিকার হতে পারে, যা সাইবার অপরাধীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে সাইবার হামলা আরও জটিল ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।