বিভিন্ন দেশের হ্যাকাররা গুগলের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে বড় ধরনের সাইবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে গুগলের থ্রেট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ (জিটিআইজি)। গুগলের তথ্যমতে, অন্তত ২০টি দেশের হ্যাকার দল জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করছে, যার মধ্যে ইরান ও চীনের সাইবার অপরাধীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। যদিও এখন পর্যন্ত হ্যাকাররা জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে সরাসরি সাইবার হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেনি।

গুগলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যাকাররা মূলত নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা দুর্বলতা শনাক্ত, আক্রমণের কৌশল নির্ধারণ এবং হামলার পর দীর্ঘ সময় নিজেদের নেটওয়ার্কের পরিচয় গোপন রাখার জন্য জেমিনি চ্যাটবটের সহায়তা নিয়ে থাকে। ইরানের হ্যাকাররা এরই মধ্যে জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ওপর নজরদারি, ফিশিং আক্রমণের কৌশল তৈরিসহ ভুয়া তথ্য প্রচার করছে। এ ছাড়া তারা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিসংক্রান্ত গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত অনুবাদ ও ব্যাখ্যার কাজেও জেমিনি চ্যাটবটের সহায়তা নিয়ে থাকে।

চীনের হ্যাকাররা জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও সরকারি সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি করাসহ নিরাপত্তা দুর্বলতা শনাক্ত করে বিভিন্ন নেটওয়ার্কে প্রবেশ করছে। এমনকি তারা বর্তমানে মাইক্রোসফট এক্সচেঞ্জ সার্ভারে পাসওয়ার্ড হ্যাক করে প্রবেশের উপায় খুঁজেছে এবং কার্বন ব্ল্যাক ইডিআরের মতো সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যারকে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করার চেষ্টা করেছে।

গুগলের তথ্যমতে, বিভিন্ন দেশের হ্যাকাররা জেমিনির নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেদ করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু তারা সফল হয়নি। তবে ডিপসিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই মডেলগুলো সহজেই প্রম্পট ইনজেকশন আক্রমণের শিকার হতে পারে, যা সাইবার অপরাধীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে সাইবার হামলা আরও জটিল ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ