ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছা সেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুন হোসেন হত্যা ঘটনায় যুবলীগ ক্যাডার আকতার ও সুমনের  নাম  উল্লেখ্য সহ ১৩ জনকে আসামি করে নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহতের একদিন পর শনিবার রাতে নিহতের স্ত্রী ১৩ জনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন কে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি  দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- আকতার, সুমন, রতন ওরফে রাখাল রতন,শাওন হাসান, রাকিব প্রধান, রাব্বিল, নয়ন ওরফে কিলার রতন, শাহ আলম, সোলেয়মান, জয়নাল, রাসেল,গোলাম রাব্বি হৃদয় ও আরব আলী সর্দারসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন।

নিহতের স্ত্রী জানায়, ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেবর রেললাইন বটতলা এলাকায় তার স্বামী মামুনের নেতৃত্বে সন্ত্রাস,  মাদক ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে যুবলীগ ক্যাডার আকতার-সুমন ও তার সহোযোগি সন্ত্রাসীরা গুলি করে। সে যাত্রায় মামুন বেঁচে যায়। 

তখন থেকেই আক্তার ও সুমন তার স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি)  ভোরে  তার স্বামীকে আক্তারের নাম করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে অপর আসামিরা। 

এদিকে হত্যাকান্ডের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও  জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

নিহত মামুন ফতুল্লা মডেল থানার পূর্ব লালপুর রেললাইনের মৃত সুমন ব্যাপারির প্ত্রু। নিহত মামুন তাদের পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।  মামুনের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান আছে। 

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানায়, নিহতের স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন। 

স্থানীয়রা জানান, আক্তার- সুমন সহোদরেরা শামীম ওসমানের আর্শীবাদে বিগত ১৫ বছর কুতুবআইল এলাকায় রাজ করে বেড়িয়েছে । তারা দুই ভাই নিজেদের শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও স্থানীয়রা তাদের সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে চিনেন।

তাদের পালিত সন্ত্রাসী  বাহিনীর গুলিতে খুন হয় ডাইং ব্যবসায়ী সোলায়মান, বীর মুক্তিযুদ্ধা গিয়াস উদ্দিন। তাদের জমি দখল করতে গিয়ে নিজের বন্ধুকের গুলিতে মৃত্যু হয় নজরুল ইসলামের। আক্তার সুমন সহোদরের পালিত সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠে। 

স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লাবাসী সবাই জানেন আক্তার সুমন সহোদর সন্ত্রাসীদের গডফাদার। কিন্তু প্রশাসন তাদের সব বিষয়েই ছাড় দিয়ে যায়। তবে কয়েক বছর আগে র‌্যাবের হাতে তারা দুই সহোদর মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: য বল গ ন র য়ণগঞ জ আকত র

এছাড়াও পড়ুন:

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ওই বৈঠক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই মামলার তদন্ত করছে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।

এই মামলা তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। ‘তারা প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’, ‘শেখ হাসিনা’সহ বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্য। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বসুন্ধরায় ওই গোপন সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। ওই দিন একই এলাকার একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিনকে (শম্পা) গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১৩ জুলাই ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়।

মেজর সাদিক নামের একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে—এমন সংবাদের বিষয়ে আজ সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। তাঁর বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

ওই ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এ রকম ঘটনা জানার পরে সেনাবাহিনীর হেফাজতেই তিনি আছেন। তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন বলেছেন, মেজর সাদিকের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভাটারা থানা এলাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের কে বি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেওয়া হয়। মেজর সাদিক সেদিন সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

বসুন্ধরার ওই কনভেনশন হলের ব্যবস্থাপক মুজাহিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে সারা দিন কনভেনশন হলের সব সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখেছিলেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীসহ সমবেতদের নাশকতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত চারটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল। তবে সবগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

মামলার তদন্ত সম্পৃক্ত ডিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা, উপস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রেপ্তার অন্যদেরও রিমান্ডে এনে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গোপন এই ষড়যন্ত্রে যাঁরা জড়িত ছিলেন, সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ