বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেললেও খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। খেলার সুযোগ পেলেও ছিলেন ছন্দহীন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে তার ফর্ম নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স তা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন নন।

মিরপুরে অনুশীলনের পর শান্তকে নিয়ে সিমন্স বলেন, ‘সে খেলুক বা না খেলুক, প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করেছে। মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি। ৫০ ওভারের ম্যাচ সে খুব বেশি খেলেনি, তবে প্রস্তুতির ঘাটতি নেই।’

বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবালও শান্তর ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তার ভাষায়, ‘শান্ত জাতীয় দলের অধিনায়ক, দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তবে দলীয় কম্বিনেশনের কারণে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। এরপরও তার দল ও খেলার প্রতি নিবেদন দুর্দান্ত ছিল।’

অন্যদিকে, বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন পেসার নাহিদ রানা। বেশি ম্যাচ খেলার কারণে শেষদিকে তার গতি কমে যায় বলে মনে করছেন কোচ সিমন্স। তিনি বলেন, ‘শেষ কয়েক ম্যাচে ওকে কিছুটা স্লো মনে হয়েছে। তবে এখন কিছুটা বিশ্রাম পেয়েছে, গতকাল অনুশীলনে আগের মতোই ধারালো মনে হয়েছে।’

এদিকে, বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কাজের প্রশংসা করেছেন সিমন্স। তিনি বলেন, ‘সালাউদ্দিন দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দুর্দান্ত কাজ করছেন। তিনি ক্রিকেটারদের উন্নতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সঠিকভাবে কাজ করছেন, যা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কঠিন গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। তবে কোচ সিমন্স আত্মবিশ্বাসী, ‘যেকোনো টুর্নামেন্টে সেরা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হয়। আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিতে পারলে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল স মন স স মন স

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ