নাফ নদী থেকে অস্ত্রের মুখে চার বাংলাদেশি জেলেকে জিম্মি করে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
Published: 11th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর মোহনা থেকে একটি নৌকাসহ চার বাংলাদেশি জেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে গেছেন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর মোহনার কাছাকাছি নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে তাঁদের জিম্মি করা হয়।
ওই চার জেলে হলেন সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাছান (৩০), আব্দু রকিম (২০), মোহাম্মদ জাবের (২৬) ও মোহাম্মদ হাসান (১৬)।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহপরীর দ্বীপ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এইচ এম সারতাজ বিন সোহরাব ও শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ নৌঘাটের নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ।
মিয়ানমারের সরকারি জান্তা বাহিনীর সঙ্গে টানা ১১ মাস সংঘাতের পর গত ৮ ডিসেম্বের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ দখলে নেন স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা। এর পর থেকে নাফ নদীতে তাঁদের জলসীমানায় নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে লেফটেন্যান্ট সারতাজ বিন সোহরাব বলেন, আজ সকালে শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাছান চার জেলেসহ তাঁর মালিকানাধীন নৌকা নিয়ে প্রতিদিনের মতো নাফ নদীর মোহনায় মাছ ধরতে যান। একপর্যায়ে মিয়ানমারের দিক থেকে একটি স্পিডবোটে করে আসা লোকজন অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশি জেলেদের নৌকাটিকে ঘিরে ফেলে। পরে জেলেরাসহ নৌকাটি নিয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে যায়। ঘটনাটি স্থানীয়দের কাছ থেকে কোস্টগার্ড অবহিত হয়। পরে বিষয়টি কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বিজিবি ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ নৌঘাটের নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় জেলেপল্লিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাটি বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাছ ধরার নৌকার আড়ালে কিছু মাদক কারবারি মিয়ানমার থেকে মাদকের বড় বড় চালান পাচার করছে। ১ ফেব্রুয়ারি মাদকের চালান পাচার করতে গিয়ে যুবদল নেতার নৌকা থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় কোস্টগার্ডের ধাওয়ায় পানিতে পড়ে আবদুস শফি (৪৫) নামে একজন জেলে মারা যান।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তাঁদের ফেরত আনতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’ ইউএনও আরও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের কারণে সীমান্তের ওপারে অধিকাংশ এলাকা আরাকান আর্মির দখলে আছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির লোকজনই বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে থাকতে পারে। তবে বিজিবি ও কোস্টগার্ড নাফ নদী সীমান্তে নিরাপত্তার পাশাপাশি নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প আর ক ন আর ম র
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে