টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪০ হাজার জলজ বৃক্ষ রোপণ করলো শিক্ষার্থীরা
Published: 13th, February 2025 GMT
সিলেট বন বিভাগের উদ্যোগে ও তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪০ হাজার জলজ বৃক্ষ হিজল ও করচ রোপণ করেছে শিক্ষার্থীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং হাওরপারের গ্রামগুলোকে ঢেউয়ের আঘাত থেকে সুরক্ষা দিতে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বুধবার টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় ৬৫ একর জমিতে এ বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেয় তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় এবং জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, বনায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং জলজ প্রতিবেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে। পাশাপাশি দুর্যোগ প্রশমন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স সার্ভিসেস (সিএনআরএস) এর সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী ইয়াহিয়া সাজ্জাদ বলেন, হাওর এলাকায় হিজল ও করচ গাছ রোপণের জন্য স্থানীয়দের দীর্ঘদিন ধরে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্ষার পানির ঢেউয়ে এই গাছের কোনো ক্ষতি হয় না এবং এগুলো বাড়তে কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয় না, যা পরিবেশবান্ধব একটি সমাধান।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি, যাতে তারা পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ রক্ষায় বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে এবং চলতি বছর ৪০ হাজার জলজ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো তারা যেন এসব গাছের যত্ন নেয় এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়। প্রয়োজনে প্রতিটি গাছে শিক্ষার্থীদের নামসংবলিত নেমট্যাগ লাগানো হবে, যাতে তারা গর্ব করে বলতে পারে—এ গাছটি আমি লাগিয়েছি।
বনায়ন প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে, জলজ প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, পাখির নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি হবে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?