দিন পেরোলেই ভালোবাসা দিবস। এমন দিনকে কেন্দ্র করে নির্মিত নাটকে অতিপরিচিত মুখ ছিলেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। সেই মিথিলা এখন নাটকে নেই। সঙ্গে থাকছেন প্রাক্তন তাহসান খান। তাদের রোমান্টিক নাটক দর্শকরা দেখতেন। ভাবতেন কী সুন্দর জুটি! পর্দার এ জুটি যে বাস্তবেরও জুটি তা মনে করতেই তৃপ্ত হতেন।
আজ দু’জনের পথ দুই দিকে। একে অপরের প্রাক্তন। দু’জনই সংসার বেঁধেছেন অন্য কারও সঙ্গে। মিথিলা কলকাতার সৃজিতের গলায় দিয়েছেন মালা আর তাহসান মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদের সঙ্গে করছেন সংসার। এখনও তাহসানকে দেখলে মিথিলাকে ভাবেন দর্শক, মিথিলা থাকলেও চর্চায় আসেন তাহসান। পথ আলাদা হওয়ার কয়েক বছরও সে প্রমাণ মিলল।
সম্প্রতি একটি আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন মিথিলা। সেখানে তাঁকে পেয়েই সাংবাদিকরা প্রশ্ন ছোড়েন প্রাক্তনের বিয়ে নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে মিথিলা এতদিন চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকলেন না। প্রশ্ন করা হলো প্রাক্তনের বিয়ে নিয়ে মিথিলার কিছু বলার আছে কিনা। অভিনেত্রী বললেন, ‘বিয়ে নিয়ে আমার কিছুই বলার নাই। এটি নিয়ে কথা বলতেও চাই না; যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। এটি আমারও কোনো ব্যক্তিগত বিষয় না, যে আমি কথা বলব। যার জীবনের ঘটনা, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে আমার কিছুই বলার থাকতে পারে না।’
ব্যক্তিচর্চার কথা এবার থাক। মিথিলার কাজের প্রসঙ্গে আসি। কলকাতার বধূ এখন তিনি। তাই দেশে সংসার কাজ সামলিয়ে সেখানেও বছরের অনেকটা সময় থাকতে হয়। থাকতে হয় কাজ নিয়েও। কয়েক বছর আগে কলকাতায় মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত ‘মায়া’। এই ছবি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় অভিষেক হয় বাংলাদেশি অভিনেত্রীর। এরপর একের পর এক কলকাতার ছবিতে থাকছেন তিনি। থাকছেন ওটিটিতেও। দেশের ওটিটিতেও তাঁর মুখরতা কম নয়। চাকরি আর সন্তান সামলিয়ে মিথিলা এখনও দারুণ ব্যস্ত অভিনয়ে।
আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে এ অভিনেত্রীর সিনেমা ‘জলে জ্বলে তারা’। সরকারি অনুদানের এই সিনেমাটির পরিচালনা করেছেন অরুণ চৌধুরী। এতে মিথিলার বিপরীতে আছেন এফ এস নাঈম। এর আগে নাটক-সিনেমায় নাঈমের সঙ্গে দেখা গেলেও সিনেমায় এবারই প্রথম।
অভিনেত্রী বলেন, ‘জলে জ্বলে তারা’ সিনেমায় মিথিলার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নাঈম। অভিনয়ের বাইরেও বাস্তব জীবনে তারা কলেজফ্রেন্ড। বন্ধু সম্পর্কে মিথিলা বলেন, নাঈম এ সিনেমায় মাঝির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নাঈম আমার কলেজজীবনের বন্ধু। ওর সঙ্গে নাটকে অভিনয় করেছি। সিনেমায় দু’জনে প্রথম কাজ করলাম। আমাদের পরিচয় বহু বছর আগে থেকে। নাঈম গোছানো মানুষ। কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। নাঈম একজন ভালো মানুষ, সিরিয়াস টাইপের মানুষ।
নিজের চরিত্রটি সম্পর্কে জানিয়ে মিথিলা বললেন, সিনেমার চরিত্রে আমি নদীপারের মেয়ে। নদীর পারে সার্কাস দেখাই, যার কিছুই নেই। একেবারেই অন্যরকম গল্প। ভিন্ন একটি চরিত্র। এমন গল্পে ও চরিত্রে আগে কখনও আমাকে দেখা যায়নি। শুটিং করেছি কালীগঙ্গা নদীর পারে। নদীতেও দৃশ্য ছিল আমার। নৌকায় করে সেসব দৃশ্যের কাজ হয়েছে।
সিনেমায় দেখা যাবে ‘তারা’ নামের মেয়েটি সার্কাসে কাজ করে। নারীকেন্দ্রিক গল্প। তা এমন চরিত্রটি করতে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেননা, নৌকার দৃশ্যগুলো সত্যিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনেক দিন ধরে শুটিং করেছি। রোদের মধ্যে শুটিং করতে কষ্ট হয়েছে। তারপরও শিল্পের প্রয়োজনে কাজ করেছি। তারা চরিত্রটি নিজের ভেতরে ধারণ করাটাও কঠিন ছিল। ওই রকম জীবন কখনও দেখিনি। সেটিই পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য কাজ করতে হয়েছে।’
সিনেমাটিতে মিথিলার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, মায়ের চরিত্রে মুনিরা মিঠু। আরও আছেন আজাদ আবুল কালাম ও শাহেদ আলী।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর কর ছ ন কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা