যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের ‘ব্রোমান্স’ (বন্ধুত্ব) পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন মোদি। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুই নেতার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় ট্রাম্পের শুল্ক ও অবৈধ অভিবাসী ইস্যু নিয়ে আলোচনা এড়ানোর চেষ্টা থাকবে।

ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর একাধিক বিশ্বনেতা ওভাল অফিসে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে গেছেন। এ তালিকায় সর্বশেষ নাম মোদির। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর সঙ্গে মোদির বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।

সফর শুরুর আগে ওয়াশিংটনের প্রতি দ্রুত শুল্কছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন মোদি। অন্যদিকে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে হার্লে-ডেভিডসনের মতো বেশ উচ্চমানের মোটরসাইকেলের শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারতের বাজারে এই স্বনামধন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার লড়াইয়ে বেশ বিরক্ত ছিলেন ট্রাম্প।

মাত্র কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ ভারতের মাটিতে অবতরণ করেছে। এটা নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে অস্বস্তি রয়েছে। যদিও ভারত সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে ‘কঠোর’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারতের বর্ষীয়ান কূটনীতিক বিক্রম মিশ্রি গত সপ্তাহে বলেন, মোদি আর ট্রাম্প—দুই নেতার মধ্যে ‘খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ রয়েছে। যদিও তাঁদের এই সম্পর্ক দীর্ঘ প্রত্যাশিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি আনেনি।

গত নভেম্বরে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতেন, তখন মোদি তাঁর ‘ভালো বন্ধুকে’ অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ওই সময় যেসব বিশ্বনেতা একদম শুরুতেই ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তাঁদের একজন মোদি।

প্রায় তিন দশক ধরে যে দলের নেতাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে এসেছেন, সবাই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। চীনের ক্রম উত্থানের বিপরীতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে ‘প্রাকৃতিক অংশীদার’ বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় বিদেশনীতি–সংক্রান্ত উদ্বেগ, বাণিজ্য নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এর আগে তিনি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতকে ‘শুল্কের সবচেয়ে বড় অপব্যবহারকারী’ বলে মন্তব্য করেছেন। হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয়বার আসার পর ট্রাম্প এখন বন্ধু-শত্রুনির্বিশেষে শুল্ক আরোপের অস্ত্র ব্যবহার করছেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পরিচালক লিসা কার্টিজ বলেন, ট্রাম্পের রোষের বিষয়টি মোদি জানেন। তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন। ট্রাম্পের রোষ কমানোর চেষ্টা করছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার এরই মধ্যে ট্রাম্পকে আরেকটি শীর্ষ অগ্রাধিকারের বিষয়ে বাধ্য করেছে—সেটা অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া।

কেননা ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি লাতিন আমেরিকায় মনোযোগ কেড়েছে। কিন্তু মেক্সিকো ও এল সালভেদরের পর ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত—পুরোটা পথ ভারতীয় অভিবাসীদের শিকল পরিয়ে রেখে ফেরত পাঠানো হয়। এটা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে ভারত। গত সপ্তায় ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। দুর্বল অবস্থানের জন্য মোদিকে দুষছেন বিরোধী রাজনীতিকেরা।

তবে মোদি একটি বিষয় এড়িয়ে যাবেন। সেটা হলো মুসলিম আর অন্য সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে তাঁর সরকারের রেকর্ডের ওপর মনোযোগ দেওয়া।

মোদি সরকারের এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মৃদু সমালোচনা করেছিল। এখন ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি সামনে আনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের জোট কোয়াডের একটি পূর্বনির্ধারিত শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষের দিকে ভারত সফর করতে পারেন।

আরও পড়ুন:

ভারতের পার্লামেন্টে বিরোধীদের আলোচনার দাবি না মেনে বিবৃতি জয়শঙ্করের

উড়োজাহাজে ৪০ ঘণ্টার নরকযন্ত্রণা: হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল, টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয় শৌচাগারে

ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে: জয়শঙ্কর

==========================================

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ক্রিকেটার এবং মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (১৬ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন—সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরু, কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম এবং বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) উদ্দীপনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার, সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিইও বিদ্যুত কুমার বসু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকিয়া কে হাসান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ড. মো. গোলাম আহাদ, সাবেক সদস্য মো.মাহবুবুর রহমান, সাবেক সদস্য মো. নজরুল ইসলাম খান, নাহিদ সুলতান, ভবতোষ নাথ, ডা. আবু জামিল ফয়সাল ও শওকত হোসেন।

তাদের মধ্যে শেষের ১০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান এই ১০ জনের  দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তরা দায়িত্ব পালনকালে পরস্পর যোগসাজশে ব্যক্তিগত লাভ ও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মাইক্রোক্রেডিট আইন (২০০৬) এর ২৪(৩) ধারা ও বিধি (২০১০) এর বিধি ১৯ (১)  লঙ্ঘন করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র ঋণ তহবিল থেকে অনুমোদনহীন গোল্ডব্রিকস এবং এ অ্যান্ড পি ব্যাটারি প্রকল্পে যথাক্রমে প্রায় ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৭ টাকা ও ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬৬  টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে স্থানান্তর করেছেন। এ জালিয়াতি সম্পর্কিত একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন আছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আসামিররা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন ঠেকানো ও এনআইডি ব্লক করা প্রয়োজন।

সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন।

আবেদনে বলা হয়, সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মো. আবুল খায়েরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে সরকারি বিধি ও শেয়ারবাজার আইন লঙ্ঘন করে শত শত কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে জানা গেছে, অভিযোগ-সংশ্লিষ্টরা অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত আবশ্যক। 

ঢাকা/এম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ