দীর্ঘ ৭ বছর ৯ মাস পর কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পেলেন জেলেরা। হাইকোর্টের আদেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে শর্তসাপেক্ষে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিভিল স্যুট শাখার সহকারী কমিশনার মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক স্মারকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এতে বলা হয়, হাইকোর্টের রুলনিশির আলোকে পিটিশনারের আবেদন নিষ্পত্তি করে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হলো। তবে এ অনুমতি পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে প্রদান করা হয়েছে।

শর্তসমূহ হলো- ১.

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদীর বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরা যাবে। ২. মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির নির্ধারিত পাঁচটি চেকপোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাতে হবে এবং ফেরার সময় তল্লাশির জন্য সহযোগিতা করতে হবে। ৩. কোনোভাবেই বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করা যাবে না। ৪. শুধুমাত্র মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদকৃত নিবন্ধিত জেলেরা মাছ ধরতে পারবেন। ৫. এ অনুমোদন সাময়িক, তিন মাস পর সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে জেলে সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো।’’

টেকনাফ জালিয়াপাড়ার শফি উল্লাহ মাঝি বলেন, ‘‘নাফ নদীতে মাছ শিকারে নিষেধজ্ঞা থাকায় চরম অর্থনৈতিক সংকটে ছিলাম। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মাছ ধরার অনুমতি পেয়ে অনেক খুশি লাগছে।’’

জেলে ছুরত আলম বলেন, ‘‘নাফ নদীতে পুনরায় জাল ফেলতে পারব জেনে ভালো লাগছে। প্রতিদিন মাছ ধরে লোকজনে যে ঋণ পায় তা পরিশোধ করতে পারব।’’  

টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে নাফ নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। প্রায় ৮ বছর পর পুনরায় মাছ ধরার অনুমতি পেয়ে জেলেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা/তারেকুর/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি