নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর
Published: 14th, February 2025 GMT
আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সচেষ্ট না হলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগের প্রতি কোনো দয়া না দেখিয়ে তাদের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বর্জন করতে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক আলোচনা সভায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন। স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি: জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবির আন্দোলনে জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা শহীদ হন। এরপর থেকে দিনটি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এই মুজিববাদী সংবিধানকে নতুন করে না সাজাতে পারলে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব না। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক গণপরিষদ গঠন করা দরকার। সেই গণপরিষদে জনমানুষের সংবিধান প্রণয়নের মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারব।’
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গড়তে যাওয়া রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি ইত্যাদি মতাদর্শভিত্তিক রাজনীতি সমাজকে বিভাজিত করে রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির যে একটি দল আসছে, সেই দলটি হবে একটি মধ্যপন্থার দল। এই দলটি কোনো বাইনারি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে না। ছাত্র-জনতার যে রাজনৈতিক দলটি জনগণের সামনে আসতে যাচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক লড়াই হবে গণপরিষদ নির্বাচন ও একটি নতুন সংবিধান।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আশা করি, গণপরিষদের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন সংবিধান পাব।’
আওয়ামী লীগকে বিচারের জায়গায় নিয়ে আসা এবং সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে একটি গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে কীভাবে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলে দেশের মানুষ যদি সচেষ্ট না হয়, তাহলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। এটি না করা হলে বাংলাদেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘এ জন্য সরকার, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইন মন্ত্রণালয়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমরা বলব, যারা হামলা করে আমাদের ভাইদের শহীদ করেছে, কোনো দল বা পক্ষ-গোষ্ঠী তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন না। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাদের বর্জন করুন। বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন। আওয়ামী লীগকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সরকারের উদ্দেশে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে ব্যানারটি রয়েছে, খুনের দায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্রুতগতিতে তাদের নিবন্ধন বাতিল করুন। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে খুনি কোনো ব্যানার যদি থাকে, খুনি হাসিনার বিচার ও আওয়ামী লীগের ব্যানারের বিষয়ে আগামী নির্বাচনের আগে যদি সমাধান না করা যায়, তাহলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না।’
সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক।
‘দরকার আইনি দলিল’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকবার বুকের রক্ত দিয়ে দেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করি। সেই মুক্ত আবহে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসে এবং স্বৈরতন্ত্র আবার শুরু হয়। আমরা স্বৈরতন্ত্রকে বিতাড়িত করতে পারি না, এটা আমাদের ব্যর্থতা। কারণ স্বৈরতন্ত্র আমাদের সংবিধানের মধ্যেই প্রোথিত আছে। যে সংবিধানটা প্রণীত হয়েছিল পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্যদের দ্বারা। এই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে। এই সংবিধানকে একটি পরিবারকে প্রতিষ্ঠার জন্য কতগুলো লিখিত বিধান বলা যায়।’
এত সংশোধনীর পর বর্তমান সংবিধান কোনোভাবে ‘লিগ্যাল ডকুমেন্ট’ (আইনি দলিল) হিসেবে আর নেই বলে মন্তব্য করেন আবদুর রহমান। তিনি বলেন, নব্বইয়ে তিন জোটের রূপরেখায় একটি নতুন বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিল। ওই রূপরেখা একটা সাংবিধানিক ডকুমেন্ট ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট একটা বিপ্লব হয়েছে। কিন্তু সেই বিপ্লবের লিগ্যাল ডকুমেন্ট তৈরি হয়নি। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে মতামত নেওয়া হয়েছিল, সেখানেও বিপ্লবের কথা বলা হয়নি। এত বড় বিপ্লবের কোনো স্বীকৃতি দিয়ে যে কোনো আইনি দলিল তৈরি করা যায়নি, এটা শুধু ব্যর্থতা নয়, এতে বিপদের আশঙ্কাও আছে। আপিল বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটা রায় হলে সেটা একটা আইনি দলিল হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, বর্তমান সংবিধান নিয়ে এগোলে আরেকটি স্বৈরতন্ত্রকে বিদায় করতে আবারও আমাদের বুকের রক্ত ঢালতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর হয়ে বলতে হবে যে তার নিরাপত্তার জন্যই একটা চুক্তি করতে হবে। সব দল ও অংশীজনদের নিয়ে এ বিষয়ে তিন জোটের রূপরেখার মতো নতুন একটা অ্যাগ্রিমেন্ট (চুক্তি) স্বাক্ষর করা যেতে পারে। এটা একটা লিগ্যাল ডকুমেন্ট হবে। এর ভিত্তিতে একটা গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। সেই গণপরিষদে সংবিধান থেকে স্বৈরতান্ত্রিক বিধিবিধান বাতিল করতে হবে। কিংবা পুরো সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নও করা যেতে পারে। বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হলে তা অবৈধ হবে। তাই সব দলের সঙ্গে চুক্তি করে সরকারকে গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের উদ্দেশে আবদুর রহমান বলেন, ‘আপনি সব রাজনৈতিক দলকে বলুন, আমাদের নিরাপত্তার জন্য সবাই মিলে একটা চুক্তি করতে হবে। সেখানে বিপ্লবের স্বীকৃতি থাকতে হবে। একই সঙ্গে লেখা থাকবে, আমরা গণপরিষদ নির্বাচনে যাব।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত হবে না। আগামী ডিসেম্বরে হওয়া উচিত গণপরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয়ীরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করবেন। এরপর গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের ‘ম্যান্ডেট’ নিয়ে তাঁরা নিজেদের আইনসভা হিসেবে ঘোষণা করবেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তাজনূভা জাবীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য টিনা নন্দী, মুশফিকুর রহমান ও হুমায়রা নূর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র গণত ন ত র ক স ব রতন ত র র রহম ন সরক র র আম দ র র জন য ত র জন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর নারান্দিয়ার বাসিন্দা শেফালী বেগম। সাভারের বাইপাইল এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হওয়ায় শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে প্রায় চার ঘণ্টা কালিহাতীর এলেঙ্গায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এই নারী। বাসে উঠতে না পেরে কর্মস্থলে যেতে তাকে উঠতে হয় পিকআপ ভ্যানে। ২০০ টাকার জায়গায় ৩৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে রওনা হন গন্তব্যে।
যাত্রা শুরুর আগে শেফালী বলেন, “গরম ও সড়কের ধুলাবালিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সড়কে চার ঘণ্টা দাঁড়িয় থেকে উপায় না পেয়ে পিকআপে করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।”
শুধু শেফালী নয়, তার মতো লাখ লাখ মানুষ আজ দিনভর ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শত শত মানুষকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কেউ ২ ঘণ্টা, কেউ ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন গণপরিবহনের জন্য।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ
সিরাজগঞ্জে গাড়ির অপেক্ষায় কর্মস্থলে ফেরা মানুষ
জুলেখা বেগম বলেন, “আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। উত্তরবঙ্গ থেকে শত শত বাস আসছে, কিন্তু কোনো বাসেই পা ফেলানোর মতো জায়গা নাই। গরমও সহ্য হচ্ছে না।”
কর্মস্থলে ফিরতে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের একাংশ
ইকবাল আলী বলেন, “মহাসড়কে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই দেখছি না। পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।”
হারুন মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন, “সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। স্বাভাবিক সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।”
এর আগে, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল হওয়ায় যমুনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তা কমে ১৪ কিলোমিটারে আসে। এছাড়া, মহাসড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ। সব মিলিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন যমুনা সেতা পারাপার করেছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ