‘হামার ব্যাটা ম্যালা দিন থাকি রাজনীতি করে না। সে একন খেলাধুলা করে। ব্যাটা কি দোষ করছিল। তাক ওমরা ডাঙ্গে (পিটিয়ে) মারি ফেলাইলো। হামার বুক খালি করলা। তোমরা হামার ব্যাটাক আনি দেও। ওমারঘরে (দুর্বৃত্তদের) ফাঁসি দাও। হামরা ওমার বিচার চাই।’

আজ শুক্রবার দুপুরে এভাবেই বিলাপ করছিলেন নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল মামুন মণ্ডলের মা রনজিনা বেগম। তাঁর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। সবাই মামুনের স্মৃতি হাতড়ে কান্নাকাটি করছিলেন। আজ দুপুরে মামুনের গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখেন এই প্রতিবেদক।

আরও পড়ুনগাইবান্ধায় দুর্বৃত্তের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা নিহত, লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ১৭ ঘণ্টা আগে

মামুন ওই গ্রামের হোটেল ব্যবসায়ী মান্নান মণ্ডলের ছেলে। তিনি ধাপেরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার ধাপেরহাট এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন তিনি।

মামুনের মায়ের আহাজারির সময় পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী দিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গতকাল আমি রোজা রেখেছিলাম। মামুন বাড়িতে ছিল। বিকেল তিনটার পর মামুনের একটি ফোন আসে। ফোন পেয়ে সে ধাপেরহাট বাজারে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়, তোমার ইফতারি পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু পাঁচটার পর খবর পাই, ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, পরিকল্পিতভাবে মামুনকে ডেকে নিয়ে রামদা, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পায়ের রগ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হত্যাকারীদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে আমার মতো আর কেউ বিধবা না হয়।’

সবার আহাজারি দেখে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিল মামুন ও দিনার পাঁচ বছর বয়সী কন্যা আয়াত খাতুন। সে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। এ সময় বিছানায় আহাজারি করছিলেন মামুনের বড় ভাই রকিব মণ্ডল। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ছোট ভাইকে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা ক্ষান্ত থাকেনি। ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল তাঁদের বাসায় হামলা চালায়। তাঁরা মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে গেছে। মামলা করলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।

এদিকে আজ শুক্রবার সকালে মামুন মণ্ডলের বাবা মান্নান মণ্ডল বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। মামুন মণ্ডলের বাবা মান্নান মণ্ডল জানান, কয়েক বছর ধরে মামুন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে আল মামুন মণ্ডল ধাপেরহাট বন্দরের জামদানি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ সাত থেকে আটজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবক মামুনের ওপর হামলা করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তরা তাঁকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে মামুন মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে থাকেন। তাঁর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় মামুনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি মারা যান।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও আটক করতে অভিযান শুরু করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: করছ ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি খুন

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পারিবারিক কলহের জেরে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন একজন। বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার হরিরামপুর ব্যাপারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফজিলা খাতুন (৪৫) উপজেলার হরিরামপুর ব্যাপারী গ্রামের বাসিন্দা মৃত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনির মিয়া (৩০) উপজেলার হরিরামপুর ব্যাপারী গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে। ঘটনার রাতে স্ত্রী রুমা আক্তারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মনির। পরে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন এবং চার বছরের ছেলে রোহানকে নিয়ে চলে যেতে চান। এতে স্ত্রীর সঙ্গে তার আবারও বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মনির হাতে থাকা ছুরি দিয়ে স্ত্রীকে আঘাত করতে গেলে শাশুড়ি ফজিলা খাতুন বাধা দেন। তখন মনির শাশুড়িকে ছুরিকাঘাত করেন। পাশাপাশি স্ত্রীকেও আঘাত করেন তিনি। পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ফজিলা খাতুনের মৃত্যু হয়।

মুক্তাগাছা থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো। তবে অভিযুক্ত পালিয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি খুন