রাশিয়ার ড্রোন হামলায় চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের সুরক্ষা প্রাচীরে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ দাবি করেছেন। আগের দিন রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
অবশ্য জেলেনস্কি এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ওই ঘটনার পরও তেজস্ত্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এমন সময় এ ঘটনা ঘটল, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জড়ো হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের নেতারা।
চেরনোবিলে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮৬ সালে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি চুল্লির একটি বিস্ফোরিত হয়। ওই চুল্লিটির দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে এটিকে সুরক্ষা প্রাচীর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বশেষ সক্রিয় চুল্লিটি ২০০০ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরপরই রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা করে রাশিয়া। ওই সময় চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এর আশপাশের এলাকা এক মাসের বেশি সময় দখল করে রেখেছিল রুশ বাহিনী।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে জেলেনস্কি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধ্বংস হওয়া ইউনিটের সুরক্ষা প্রাচীরে রাশিয়ার ড্রোন আঘাত হানে। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, সুরক্ষা প্রাচীরের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধে বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক সুরক্ষা প্রাচীরের কিছু ছবি পোস্ট করেন। এসব ছবিতে সুরক্ষা প্রাচীরের ওপরের দিকে ছোট আকারে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
জেলেনস্কি বলেন, ‘কোনো ধরনের পরিণতির কথা না ভেবে আজকের দিনে এ ধরনের স্থাপনায় হামলা চালানো, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নেওয়া এবং যুদ্ধ শুরু করার কাজটি একমাত্র রাশিয়াই করতে পারে।’
মিউনিখ সম্মেলনে নজর
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানিতে অবস্থান করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। গতকাল সম্মেলন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই জেলেনস্কির সঙ্গে এই বৈঠকের কথা জানা গেল।
মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকেরা অংশ নেন। পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর শান্তি আলোচনা নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণায় ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি পক্ষপাত দেখাতে পারেন। ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে।
জেলেনস্কি বলেছেন, আলোচনার টেবিল থেকে তাঁদের বাদ রাখা হলে তাঁরা কোনো ধরনের চুক্তিতে সম্মত হবেন না। তিনি মনে করেন, আলোচনার টেবিলে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদেরও থাকা প্রয়োজন।
যুদ্ধ বন্ধে প্রস্তুত থাকার বিষয়ে পুতিন যে দাবি করেছেন, তা বিশ্বাস না করার জন্যও পশ্চিমা নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি খুন
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পারিবারিক কলহের জেরে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন একজন। বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার হরিরামপুর ব্যাপারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফজিলা খাতুন (৪৫) উপজেলার হরিরামপুর ব্যাপারী গ্রামের বাসিন্দা মৃত জালাল উদ্দিনের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনির মিয়া (৩০) উপজেলার হরিরামপুর ব্যাপারী গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে। ঘটনার রাতে স্ত্রী রুমা আক্তারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মনির। পরে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন এবং চার বছরের ছেলে রোহানকে নিয়ে চলে যেতে চান। এতে স্ত্রীর সঙ্গে তার আবারও বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মনির হাতে থাকা ছুরি দিয়ে স্ত্রীকে আঘাত করতে গেলে শাশুড়ি ফজিলা খাতুন বাধা দেন। তখন মনির শাশুড়িকে ছুরিকাঘাত করেন। পাশাপাশি স্ত্রীকেও আঘাত করেন তিনি। পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ফজিলা খাতুনের মৃত্যু হয়।
মুক্তাগাছা থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো। তবে অভিযুক্ত পালিয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।