কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় একটি খালের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটি কেটে লুট করে নেওয়া হয়েছে। শুধু খালের ভেতরেই নয়, লুট করা হয়েছে পাড়ের মাটিও। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও খালটির অস্তিত্ব রক্ষা হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন দাবি করেছে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদকলমিয়া ও বরল গ্রামে। লালমাই উপজেলার আশকামতা, বরল, চাঁদকলমিয়া, ফতেহপুর ও পশ্চিম অশ্বত্থতলা হয়ে খালটি ডাকাতিয়া নদীতে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লুট করে নেওয়া হয়েছে মাটি। বর্তমানে সরেজমিন গেলে চাঁদকলমিয়া ও বরল গ্রাম এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। 

প্রায় এক মাস ধরে মাটি কাটা চলতেছে। প্রশাসনের লোকজন সবকিছু জানে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। শাহজাহান, স্থানীয় বিএনপির কর্মী

স্থানীয়দের ভাষ্য, সম্প্রতি গভীর রাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত এই খালের মাটি কাটা হয়েছে। লুটের এসব মাটি গেছে আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে। বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে প্রায় ৫০০ গজের মধ্যেই খালটির মাটি লুট হয়েছে। এরপরও খালটির অস্তিত্ব রক্ষা হয়নি। 

জানতে চাইলে বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, ‘মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে শিগগিরই।’ 

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, খালটির ওপর দিয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ গেছে। উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদকলমিয়া ও বরল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের একটি রেলসেতু–সংলগ্ন স্থানে খালের ভেতরে বড় বড় গর্ত। খালটির দুই পাড়েও মাটি নেই। কোথাও কোথাও পাড়েও গর্ত তৈরি হয়েছে। 

স্থানীয় কৃষক আবদুস ছোবহান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এক মাডি কারবারি খালের দুই হাড়ের মাডি (দুই পাড়ের মাটি) কাটতো চাইছিল। তখন আমরা প্রতিবাদ করছি। কিন্তু এইবার আর রক্ষা করতাম পারিনো। সব কাডি লই গেছে তারা। খালটার কোনো অস্তিত্ব রাখেনো।’

স্থানীয় লোকজন জানান, গত সোমবার সকালে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে চাঁদকলমিয়া গ্রামের শাহজাহান ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে বরল গ্রামের মহিন উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম পক্ষের মারামারি হয়েছে। শাহজাহানের সমর্থকেরা বরল গ্রামের মাটিশ্রমিকদের মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি।

চাঁদকলমিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান স্থানীয়দের কাছে বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার বিকেল এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাটি কাটার বিরুদ্ধে। বরল গ্রামের মহিন, জাহাঙ্গীর, মনির পুরা খালটারে শেষ করে ফেলছে। খালের কোনো অস্তিত্ব তারা রাখেনি। সোমবার আমরা তাদের বাধা দিতে গেছি, তখন সেখানে ঝামেলা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে মাটি কাটা চলতেছে। প্রশাসনের লোকজন সবকিছু জানে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে যারা মাটি কাটে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উল্টো আমাদের মতো যারা প্রতিবাদ করে, তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে বরল গ্রামের মহিন উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এক মাসের বেশি সময় ধরে খালের মাটি লুট করে নেওয়া হয়েছে। আমরা বাধা দিয়েছি, কিন্তু মাটি লুটকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা থামেনি। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই এসব বিষয়ে জানে, এরপরও মাটিকাটা বন্ধ হয়নি। সোমবার দুই পক্ষ যখন মাটির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে, তখন পুলিশ আসে।’

মঙ্গলবার বিকেলে লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার চাঁদকলমিয়া ও বরল এলাকায় মাটি কাটা নিয়ে মারামারি হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মাটি কাটা বন্ধ আছে। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’

মঙ্গলবার বিকেলে লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ছাড়া স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। আমি ঘটনাটির খোঁজ নিয়ে দেখছি। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন স মব র ল ট কর ব গম র ল কজন ব ষয়ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে কারো দ্বিমত নেই: উপদেষ

দ্রুতই কবিগুরু রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের আশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কারো দ্বিমত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন যৌক্তিক দাবি। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়টি ইতোমধ্যে একনেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।’’ 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়িতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেছেন উপদেষ্টা। সোমবার (১৬ জুন) সকালে ক্যাম্পাস পরিদর্শন শেষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বরাদ্দ ৫০০  কোটি টাকা বেশি নাকি কম, এতে হতাশার কিছু নেই। আমি এখানে এসেছি, শুধু এটা দেখতে জায়গাটা আসলে কেমন, কতটুকু উপযোগী।’’ এ সময় তিনি চলনবিল অধ্যুষিত বড়াল নদী এবং গোচারণ ভূমির ক্ষতি না করে পরিবেশ ঠিক রেখে ক্যাম্পাস নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আরো পড়ুন:

সব জেলায় ‘সেবামূলক মেলা’ জুলাইয়ে

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রণোদনা চান উপদেষ্টা

এ সময় বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাদপুর সার্কেল, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। 

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম হাসান তালুকদার, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া, ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদসহ শিক্ষকমণ্ডলী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এ এসে পৌঁছান উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে স্বাগত জানান। পরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এর অডিটোরিয়ামে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ জমি এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখেন তিনি। আলোচনা শেষে সেখানে বৃক্ষরোপণ করেন। 

ঢাকা/অদিত্য/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ