জেলের জালে আটকা ২০০ কেজির ভোল মাছ বিক্রি হলো ১৭০০ টাকা কেজিতে
Published: 17th, February 2025 GMT
নাফ নদে টানা জালের আটকা পড়া ভোল মাছটি অবশেষে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার উপরের বাজারে বিক্রি করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে শুরু হয়ে বেলা ১১টায় শেষ হয় মাছ বিক্রি। মাছটি দেখার জন্য এবং কেনার জন্য উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সকালে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে করে মাছটি বাজারে আনা হয়। চারজন শ্রমিক মাছটি কেটে টুকরো করছিলেন। সেখান থেকে কেউ দুই কেজি, কেউ তিন কেজি, কেউ বা পাঁচ, দশ ও বিশ কেজি করে কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি মাছ বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। তবে আগের দিন মাইকিং করে দাম হাঁকা হয়েছিল মাছের দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি।
এর আগের দিন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদের ঘোলারচর এলাকায় ফেলা হয়েছিল টানা জাল। বেলা ১১টার দিকে এ মাছ ধরা পড়ে। এ জালে ধরা পড়ে ২০০ কেজি (৫ মণের বেশি) ওজনের বিশাল একটি ভোল মাছ। প্রায় চার ফুট আকারের মাছটিকে ছয়জন মিলে তুলে আনেন মাছের পাইকারি আড়তে।
সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, শাহপরীর দ্বীপ কোনারপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ কালু ফকিরের টানা জালে ভোল মাছটি ধরা পড়ে।
শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া ট্রলার মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাসান বলেন, রোববার ভোরে নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ ঘোলারচর অংশে ১০ থেকে ১২ জেলে টানা জাল ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর জাল টানেন জেলেরা। এসময় ছোট ছোট মাছের সঙ্গে বিশাল বড় ভোল মাছটি জালে আটকে যায়। পরে জেলেরা নাফ নদ থেকে বড় মাছটি রশি দিয়ে বেঁধে টেনে টেনে চরের উপরে তুলে নিয়ে আসেন।
স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মাছটি শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া মৎস্যঘাটে তুলে আনা হয়। পরে টেকনাফের মাছ ব্যবসায়ী জাফর আলম ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন। পরে তিনি মাছটি টেকনাফ নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে মাছটি বরফ দিয়ে রাখা হয়েছিল।
মাছ ব্যবসায়ী জাফর আলম জানান, ১ হাজার ৩৫০ টাকা কেজি দরে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় মাছটি তিনি কেনেন। এটি টেকনাফ বড়বাজারে কেটে প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য পৌরসভায় মাইকিং করা হয়। গতকালই তিন মণের মতো মাছ আগাম বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, শাহপরীর দ্বীপের এক জেলের টানা জালে একটি বিশাল ভোল মাছ ধরা পড়ার খবর শুনেছি। শীত মৌসুমে ৫ থেকে ১৫ কেজি ওজন পর্যন্ত ভোল মাছ জেলেদের জালে আটকা পড়ে। এই মাছ সাধারণত ৪০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, সাগরে মাছ ধরার ওপর বিভিন্ন ধরনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে পালন হওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। জেলেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫