প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর শাসনের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই চীন সফর করতে চান বলে জানা গেছে। সফরের পরিকল্পনা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে হয়তো। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিশ্চিত হতে চান যে বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফল আসবে। বর্তমান শুল্কযুদ্ধ আরও বাড়লে এই বৈঠক ভেস্তে যেতে পারে।

ট্রাম্প ও সির মধ্যে সংলাপ দুই দেশেরই স্বাগত জানানো উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না সব অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যু একসঙ্গে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ‘বড় চুক্তি’ করতে চাওয়া। এর চেয়ে বরং তার স্বার্থ রক্ষায় কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে অগ্রগতি আনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

চীন আমেরিকার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে তারও দুর্বলতা রয়েছে। চীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। যেমন রিয়েল এস্টেট খাতের অস্থিরতা, সরকারি ঋণের বোঝা, দুর্বল ভোক্তা ব্যয়, জনসংখ্যার বার্ধক্য এবং প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। এসব বিষয় ট্রাম্পের জন্য কিছুটা সুবিধা তৈরি করতে পারে। তবে যতটা আশা করা হচ্ছে ততটাও নয়। সি মনে করেন, চীনের এসব সমস্যা সাময়িক। বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে।

সি আলোচনার মাধ্যমে কিছু সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করবেন। তিনি চান নতুন করে শুল্ক আরোপ না হোক, চীনের স্থায়ী বাণিজ্যসুবিধা যুক্তরাষ্ট্র বাতিল না করুক এবং মার্কিন উন্নত প্রযুক্তিতে চীনের প্রবেশাধিকার কিছুটা শিথিল করা হোক। এ জন্য বেইজিং কৌশলে নানা প্রলোভন ও চাপ প্রয়োগের নীতি নিতে পারে।

চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি কৃষিপণ্য ও জ্বালানি কিনতে রাজি হবে। সেখানে বড় বিনিয়োগও করবে, যা চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। অবৈধভাবে আমেরিকায় থাকা নাগরিকদের ফেরত নিতে পারে চীন। দিতে পারে ইউক্রেন সংকট নিরসনে সহায়তার প্রস্তাবও।

ট্রাম্প চীন সফরে গেলে কিছু নির্দিষ্ট দাবি তুলতে পারেন। তাঁর প্রথম দাবি হওয়া উচিত যে চীন যেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে। রাশিয়ার যুদ্ধ সক্ষমতা ইউক্রেনে চলমান সংঘাত জিইয়ে রাখছে। তৈরি করছে ইউরোপ ও ট্রান্স-আটলান্টিক নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি। যদি সি এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে ট্রাম্প পাল্টা চীনের সেইসব কোম্পানি ও ব্যাংকের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা ভাববেন হয়তো, যারা রাশিয়াকে ড্রোন, স্যাটেলাইট ও অন্যান্য প্রযুক্তি পেতে সহায়তা করছে। ইউরোপকেও একই পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে পারেন। অন্যদিকে সি-কে এটাও স্পষ্ট জানানো হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, চীন তার অপূর্ণ প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করবে। বিশেষ করে মার্কিন জ্বালানি ও কৃষিপণ্য কেনার ব্যাপারে।

ট্রাম্প চীনের মার্কিন বিনিয়োগকেও স্বাগত জানাতে পারেন। তিনি এর আগেও বলেছেন যে চীনা কোম্পানিগুলোর ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানার মতো বিনিয়োগ তিনি সমর্থন করেন। এগুলো আমেরিকানদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রও চীনের কাছ থেকে কিছু প্রযুক্তি আদায় করবে, যাতে মার্কিন কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না থাকে। চীন বহু বছর ধরে বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত দিয়ে ব্যবসার সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রকেও চীনের সঙ্গে এই নীতিতে এগোতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগামী বহু বছর ধরে চলবে। তবে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণের সুযোগ এনে দেয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সুযোগ তৈরি হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের এই প্রথম বৈঠক যদি ঠিকভাবে এগোয়, তাহলে চীনের সঙ্গে আরও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আর তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।

পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতেও অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা চান। কিন্তু সি চীন পিং পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়াতে আগ্রহী। ২০৩৫ সালের মধ্যে চীন এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হতে চায়। আমেরিকান বিশ্লেষকরা মনে করেন ট্রাম্পের উচিত চীনের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পর্কে আরও স্বচ্ছতা দাবি করা। আর নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে পরমাণু, সাইবার ও মহাকাশ প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থা করা।

তবে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে কিছু ছাড় দিতেই হবে। নতুন শুল্ক আরোপ না করার পাশাপাশি কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে আগের শুল্কও প্রত্যাহার করা হতে পারে। একই সঙ্গে চীনকেও দিতে হবে একই ধরনের ছাড়। চীনের স্থায়ী বাণিজ্যসুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে পারে যে পারমাণবিক যুদ্ধ দুই দেশের জন্যই ধ্বংসাত্মক হবে। ট্রাম্প সি-কে ওয়াশিংটনে এক গালভরা আয়োজনে স্বাগত জানানোর প্রস্তাবও দিতে পারেন। এতে চীনা নেতৃত্বের মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।

তবে কিছু বিষয় আলোচনার বাইরে থাকার সম্ভাবনা বেশি। মার্কিন প্রযুক্তির এমন কোনো স্থানান্তর ট্রাম্প অনুমোদন করবেন না, যা চীনের সামরিক সক্ষমতা বাড়ায়। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি কমাবে না। তাহলে তাইওয়ানের ওপর চীনের দাবিকে সমর্থন দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগামী বহু বছর ধরে চলবে। তবে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণের সুযোগ এনে দেয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সুযোগ তৈরি হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের এই প্রথম বৈঠক যদি ঠিকভাবে এগোয়, তাহলে চীনের সঙ্গে আরও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আর তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।

বনি এস গ্লেসার জার্মান মার্শাল ফান্ডের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক 

নিউইয়র্ক টাইমস–এর ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ জাভেদ হুসেন

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন য আম র ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ