অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগেই নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের লক্ষ্য রেখে যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে বলে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন। নতুন ছাত্রসংগঠনের পক্ষে জনমত গঠনে আগামীকাল মঙ্গলবার এবং বুধবার দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে নতুন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গঠনের প্রক্রিয়া’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের, রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, জাহিদ আহসান প্রমুখ। এতে তারা দল গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তবে দলের নাম ও কবে নাগাদ আত্মপ্রকাশ হতে পারে সেটি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। 

ছাত্রসংগঠনে যোগদানকারীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে আসবেন। প্রাথমিকভাবে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে। নতুন এই সংগঠনের স্লোগান হবে ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’।

জানা গেছে, দুইটি কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে থাকবেন আবু বাকের মজুমদার এবং আবদুল কাদের। তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবু বাকের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভূতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র আর আবদুল কাদের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজয় একাত্তর হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া সমন্বয়ক রিফাত রশীদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেলের সম্পাদক জাহিদ আহসান, তাহমিদ আল মুদাসসির, হাসিব আল ইসলামকেও শীর্ষ নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে।

নারীদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক সানজানা আফিফা অদিতি, নিশিতা জামান নিহা, রওনক জাহান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সিনথিয়া জাহিন আয়েশা প্রথম সারিতে স্থান পেতে পারেন।  

সংবাদ সম্মেলনে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্রসংগঠন গঠনের উদ্দেশ্যে তারা আগামীকাল মঙ্গলবার এবং বুধবার সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে এবং অফলাইনে জনমত জরিপ চালাবেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কার্জন হল এলাকা, মোকাররম ভবন এলাকা, কলাভবন, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ এলাকা, কাজী মোতাহার ভবন এলাকায় এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ, সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদরাসায় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

নতুন এই ছাত্রসংগঠন স্বতন্ত্রভাবে স্বাধীনভাবে রাজনীতি পরিচালনা করবে বলে জানান আবু বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রসংগঠন লেজুড়বৃত্তিক হবে না। নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা হচ্ছে। তার সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আমাদের সংগঠনের নেতৃত্ব প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘বটম টু টপ’ থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সংগঠনের আর্থিক বিষয় অভ্যন্তরীণ চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

আবদুল কাদের বলেন, আন্দোলন চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সবাই তাদের নিজস্ব সংগঠনে ফিরে গেছেন। কিন্তু এর বাইরে একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছিল, যারা কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাদের তো এখন কোনো যাওয়ার জায়গা নেই। সেই দিকটা বিবেচনা করেই আমরা একটা ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাজন হয়নি বা এখানে অনুমতি নেওয়ার তেমন কিছু নেই।

রশিদুল ইসলাম রিফাত ওরফে রিফাত রশীদ বলেন, আমাদের এই ছাত্রসংগঠন একটি আলাদা উদ্যোগ। এর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্দিষ্ট অরগানোগ্রাম আছে। সেখানে আহ্বায়ক, সদস্য সচিবরা তাদের মতো করে পরিচালনা করবেন। এটি একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগ; নিজস্ব গঠনতন্ত্র এবং পলিসি অনুযায়ী এটি বাস্তবায়িত হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ র র স গঠন স গঠন র পর চ ল র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ