দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) জন্য স্থাপন করা শিবিরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

সেনা সদরের উদ্যোগে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এ ব্রিফিংয়ের শুরুতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো.

শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ব্রিফিংয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এ সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫০ দিনে ১৭২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৫২৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং মূল সড়কে ৩০টি অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিগত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সংক্রান্ত ১৪টি, সরকারি সংস্থা বা অফিস–সংক্রান্ত ৩টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯টি এবং অন্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ১৬টি।

গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২ হাজার ১৪২ জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মব জাস্টিসসহ যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি ও হত্যা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের অনেককে সেনাবাহিনী চিকিৎসা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৫৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন এখনো চিকিৎসাধীন।

ঢাকার মোহাম্মদপুর ও বনানীতে দুটি ডাকাতির ঘটনায় বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সেনাসদস্যের নাম এসেছে—এমন এক প্রশ্নে শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে ঘটনা দুটি অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের সেনা আইনে বিচার করা হবে। আর সাবেক সদস্যদের বিচার হবে দেশের প্রচলিত আইনে। সেনাবাহিনী কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। সেনাবাহিনী সব সময় নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করে দেশের মানুষের পাশে থেকে সব সময় কাজ করে।

আসন্ন মাহে রমজানে বাজারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, এ প্রশ্নে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের একটি বিশেষ মন্ত্রণালয় এবং একটি বিশেষ দল আছে। যারা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা এটা বিবেচনা করছে। সরকার যদি সহায়তা চায়, তবে সেনাবাহিনী কাজ করবে।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় অপহরণের শিকার ২৬ জন রাবারশ্রমিককে উদ্ধারের বিষয়ে সেনাবাহিনী কী করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, দুষ্কৃতকারী কোনো একটি দল এটি করেছে। তাঁদের উদ্ধারের কাজ চলমান।

পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিনের দৌরাত্ম্য আছে উল্লেখ করে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক জায়গায় তাদের (কুকি–চিন) দৌরাত্ম্য কমিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী। কুকি–চিনের দুটি ক্যাম্প গত রোববার ধ্বংস করা হয়েছে। আগে কুকি–চিনের অত্যাচারে এলাকা ছেড়ে যাওয়া ১১টি বম পরিবারের ৮১ জন সদস্য সেনাবাহিনীর সহায়তায় সম্প্রতি এলাকায় ফিরে এসেছেন।

সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে চাঁদাবাজি আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ক জ কর সরক র ধরন র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

এশিয়া কাপে আজকের রাত যেন এক নাটকীয় অধ্যায়। ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবুধাবির মাঠে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া এই লড়াই কেবল দুই দলের নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভাগ্যও। কোটি টাইগার সমর্থক তাই আজ তাকিয়ে থাকবে টিভি পর্দায়। কারণ, এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সুপার ফোরে উড়াল দেবে, নাকি গ্রুপ পর্বেই শেষ হবে স্বপ্নযাত্রা।

গ্রুপের সমীকরণ এখন টানটান নাটকের মতো। তিন ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। সমান ৪ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ঝুলিতে আছে ২ পয়েন্ট; এক জয় ও এক হারের ফল। হংকং অবশ্য তিন ম্যাচেই হেরে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে।

আরো পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

এখন হিসাবটা এমন—
আফগানিস্তান হেরে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই সুপার ফোরে।
আফগানিস্তান জিতলে সমীকরণ জটিল হবে। তখন শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে স্পষ্ট এগিয়ে থাকবে আফগানরা (২.১৫০)। শ্রীলঙ্কার রান রেট ১.৫৪৬, আর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে -০.২৭০-তে।

অর্থাৎ আফগানিস্তান যদি জেতে, তবে বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে এক অসম্ভব সমীকরণের দিকে। সেটা হলো- লঙ্কানদের অন্তত ৭০ রানের ব্যবধানে হারতে হবে এবং তা করতে হবে ৫০ বল হাতে রেখে। অন্যথায় রান রেটের খেলায় পিছিয়েই থাকতে হবে টাইগারদের। তবে বৃষ্টি যদি হানা দেয় কিংবা ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দু’দলই নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে সুপার ফোরে।

ম্যাচকে ঘিরে দুই শিবিরেই চাপ-উত্তেজনার আবহ। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব মনে করেন, চাপটা আসলে শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি, “আমরা এসব টুর্নামেন্ট খেলতে অভ্যস্ত, আমাদের কোনো চাপ নেই। শ্রীলঙ্কা ভালো দল ঠিকই, তবে তারাও চাপে থাকবে। আমার মনে হয় দারুণ একটা ম্যাচ হবে।”

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সমর্থকরা আমাদের জয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরাও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামব।”

হংকংয়ের বিপক্ষে জিতলেও শ্রীলঙ্কাকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা বলছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা সহজ হবে না তাদের জন্যও। শেষ পর্যন্ত কারা হাসবে জয়ের হাসিতে, আর কোন সমীকরণে দাঁড়াবে বাংলাদেশের ভাগ্য; এই প্রশ্নের উত্তরই দেবে আজকের আবুধাবির রাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ