দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী
Published: 17th, February 2025 GMT
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) জন্য স্থাপন করা শিবিরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
সেনা সদরের উদ্যোগে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এ ব্রিফিংয়ের শুরুতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো.
এ ব্রিফিংয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এ সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫০ দিনে ১৭২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৫২৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং মূল সড়কে ৩০টি অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিগত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সংক্রান্ত ১৪টি, সরকারি সংস্থা বা অফিস–সংক্রান্ত ৩টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯টি এবং অন্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ১৬টি।
গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২ হাজার ১৪২ জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মব জাস্টিসসহ যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি ও হত্যা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের অনেককে সেনাবাহিনী চিকিৎসা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৫৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন এখনো চিকিৎসাধীন।
ঢাকার মোহাম্মদপুর ও বনানীতে দুটি ডাকাতির ঘটনায় বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সেনাসদস্যের নাম এসেছে—এমন এক প্রশ্নে শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে ঘটনা দুটি অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের সেনা আইনে বিচার করা হবে। আর সাবেক সদস্যদের বিচার হবে দেশের প্রচলিত আইনে। সেনাবাহিনী কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। সেনাবাহিনী সব সময় নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করে দেশের মানুষের পাশে থেকে সব সময় কাজ করে।
আসন্ন মাহে রমজানে বাজারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, এ প্রশ্নে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের একটি বিশেষ মন্ত্রণালয় এবং একটি বিশেষ দল আছে। যারা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা এটা বিবেচনা করছে। সরকার যদি সহায়তা চায়, তবে সেনাবাহিনী কাজ করবে।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় অপহরণের শিকার ২৬ জন রাবারশ্রমিককে উদ্ধারের বিষয়ে সেনাবাহিনী কী করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, দুষ্কৃতকারী কোনো একটি দল এটি করেছে। তাঁদের উদ্ধারের কাজ চলমান।
পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিনের দৌরাত্ম্য আছে উল্লেখ করে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক জায়গায় তাদের (কুকি–চিন) দৌরাত্ম্য কমিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী। কুকি–চিনের দুটি ক্যাম্প গত রোববার ধ্বংস করা হয়েছে। আগে কুকি–চিনের অত্যাচারে এলাকা ছেড়ে যাওয়া ১১টি বম পরিবারের ৮১ জন সদস্য সেনাবাহিনীর সহায়তায় সম্প্রতি এলাকায় ফিরে এসেছেন।
সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে চাঁদাবাজি আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ক জ কর সরক র ধরন র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁওয়ে শহিদুল ইসলাম শহিদকে হত্যার মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক গত বুধবার (৩০ জুলাই) আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
শনিবার (২ আগস্ট) চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
চবি ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা কোনো মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।
২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় একাধিক পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
এর আগে নিউ মার্কেট মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ষোলশহর মেয়র গলিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এর পর বহদ্দারহাট মোড়-সংলগ্ন সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন অটোরিকশাচালক শহিদ। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহিদের ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নুরুল আজিম রনিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আগামী ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগপত্রে ১২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ জন সাধারণ মানুষ, ৯৯ জন পুলিশ ও ১ জন চিকিৎসক।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক