জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপায় হতে পারে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি
Published: 18th, February 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনার একটি অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্নভাবে ভুগতে শুরু করেছে বিশ্বের নানা দেশের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট কিনা–এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে টের পেতে শুরু করেছে। যেমন বলা চলে, দেশের ঋতুচক্রের সময় পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শহরাঞ্চলে শুধু গরম ছাড়া আর কোনো ঋতু টের পাওয়া যাচ্ছে না। আবার গ্রীষ্ম, শীত বা বর্ষাও চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। ঋতুচক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না; অন্যদিকে পরিবর্তিত এই ঋতুর সঙ্গে এখনও তারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি। পাশাপাশি এর প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষি ব্যবস্থাসহ জীবন-জীবিকার ওপর।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে; একই সঙ্গে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়ছে, ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি ও পানি ক্রমে লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাব মানুষের জীবনযাত্রা, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বায়ুদূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাইঅক্সাইড, সিএফসি ইত্যাদি) নিঃসরণের হার বাড়তে থাকাকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। বায়ুদূষণ ও কার্বন নিঃসরণের হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া, নির্মাণকাজের সময় তৈরি হওয়া ধুলাবালু, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বনভূমি ধ্বংস করা এবং তেল-গ্যাসের মতো অনবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর যানবাহন বহুলমাত্রায় ব্যবহার করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে নিয়ে আসতে, একই সঙ্গে বায়ুদূষণ ও কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনতে বিশ্বের অনেক দেশই নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশ নরওয়ের উদাহরণ সম্পর্কে বলা যেতে পারে। দেশটি এ বছরের মধ্যে গাড়ি থেকে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বলা চলে, লক্ষ্যের খুব কাছাকাছিই রয়েছে দেশটি। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, নরওয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি যানবাহন বিদ্যুৎচালিত (ইভি) বা নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর।
বাংলাদেশে প্রচলিত পরিবহন খাত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে যানজটের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। তবে এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যানবাহনের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। ইভি ব্যবহার করলে ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গমন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, যা বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ধীর করতে অসামান্য ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে এটি অনবায়নযোগ্য জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। সোলার প্যানেল বা উইন্ড টারবাইনের উৎস ব্যবহার করে পাওয়া বিদ্যুতের মতো পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ইভির ব্যাটারি চার্জ করা সম্ভব। আবার এতে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমে আসায় অর্থনৈতিক চাপও কমে আসে। ফলে এটি পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয়ী একটি উপায় হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কার্যকর এই উপায়টিকে দেশে জনপ্রিয় করতে হলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন– গাড়ি থেকে শূন্য কার্বন নিঃসরণে নরওয়ের লক্ষ্য পূরণে ইভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, এটা ঠিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতিগুলোও ছিল এই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক। যেমন– ট্যাক্স-ভ্যাটে ছাড়, রোড ট্যাক্সে ছাড়, গাড়ির কাগজপত্রবিষয়ক জটিলতা কমিয়ে আনা, ক্ষেত্রবিশেষে টোল ফ্রি যাতায়াত; এমনকি সরকারি প্রণোদনায় চার্জিং স্টেশন নির্মাণ ইত্যাদি।
বাংলাদেশও ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট যানবাহনের ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎচালিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে আপাতত অনেক দূরে অবস্থান করছি আমরা। বিশেষ করে তেল-গ্যাসের মতো জ্বালানিনির্ভর গাড়ি ও বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে যদি একই রকম নীতি ও ট্যাক্স-ভ্যাটের নিয়ম থাকে, তাহলে কীভাবে মানুষ পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত হবে। চার্জিং স্টেশন স্থাপনের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিও সরকারের নীতিগত সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশে ইভির প্রচলন বাড়াতে হলে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মানুষকে সচেতন করে তোলার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা না পেলে এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট হবে না। বিশেষ করে সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করলেই জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক প্রভাব আমাদের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। শুরুর দিকে খরচ কিছুটা বেশি মনে হলেও টেকসই ও স্থায়িত্ব বিবেচনায় দীর্ঘ মেয়াদে এই পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত বাস্তবসম্মত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। বাংলাদেশে ইভির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই আগামী গড়ে তুলতে পারি। সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগ এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত করতে পারে। জলবায়ু সংরক্ষণের এ যাত্রায় আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে দেশকে একটি সমৃদ্ধ আগামীর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
শাহনুমা শারমিন: স্ট্র্যাটেজি এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রধান, বিওয়াইডি বাংলাদেশ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরণ র হ র ব শ ষ কর ক র বন ন ব যবহ র পর ব শ সরক র জলব য় জলব য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল ম্যাচের লভ্যাংশ নোবেলজয়ী এনজিওর মাধ্যমে গাজার মানুষদের দেবে নরওয়ে
নরওয়ে ফুটবল ফেডারেশন (এনএফএফ) জানিয়েছে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচের লভ্যাংশ ‘ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস’ এনজিওকে দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সাহায্য দেয় ১৯৯৯ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই সংস্থা। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আগামী ১১ অক্টোবর ‘আই’ গ্রুপ থেকে অসলোয় স্বাগতিক হয়ে ইসরায়েলের মুখোমুখি হবে নরওয়ে।
যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত এমন ৭০টি দেশে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে ‘ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস’। এই স্বাধীন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে পথচলার বিষয়টি গতকাল জানায় এনএফএফ।
আরও পড়ুনইউনাইটেডের জার্সি পরে আসায় নিজেদের কর্মীকে ছাঁটাই করল ম্যান সিটি৪ ঘণ্টা আগে২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর গাজায় সামরিক হামলা চালায় ইসরায়েল এবং তাতে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ওই অঞ্চলে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এনএফএফ সভাপতি লিসে ক্লাভেনেস বিবৃতিতে বলেন, ‘২৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম ছেলেদের কোনো আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে আমাদের। একই সময়ে এই ম্যাচটি এমন এক সময়ে খেলা হচ্ছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে মারাত্নক মানবিক বিপর্যয় ঘটছে...ওই অঞ্চলে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে, আমরা তা দেখে উদাসীন থাকতে পারি না এবং থাকব না; বিশেষ করে গাজায় সাধারণ মানুষদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হচ্ছে।’
ক্লাভেনেস বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আমরা লভ্যাংশ এমন একটি সংস্থাকে দিতে চাই, যারা গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন জীবন বাঁচায় এবং জরুরি সাহায্য পাঠায়। ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস ঠিক এই কাজই করে।’
এনএফএফ জানিয়েছে, তাদের ঘোষণার পর নরওয়ের অন্যতম বড় একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এই এনজিওর মাধ্যমে গাজায় ৩ লাখ ৫ হা্জার ডলার সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
আরও পড়ুননাটকীয়তা ও রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের অপেক্ষা৬ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া মানুষদের সাহায্যের সিদ্ধান্ত গত মাসেই জানিয়েছিল নরওয়ে ফুটবল। গাজায় হামলা চালিয়েও ইসরায়েল কীভাবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নিচ্ছে, সে বিষয়ে এর আগে ফিফাকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন ক্লাভেনেস। তিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলকে অবশ্যই এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত আইনি আদর্শকে অবমূল্যায়িত করে।’
গাজার শিশুদের একটি ফুটবল প্রজেক্টের মাধ্যমে সহায়তা করেছে এনএফএফ। ফিলিস্তিনের স্কুল ও শরণার্থীশিবিরগুলোর সঙ্গেও দীর্ঘমেয়াদি কাজ শুরু করেছে তারা।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, অসলোর উল্লেভাল স্টেডিয়ামে নরওয়ে-ইসরায়েল ম্যাচের সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তবে এই ম্যাচের ২৩ হাজার টিকিট বিক্রি করে এনএফএফ কী পরিমাণ লাভ করবে তা জানা যায়নি। স্টেডিয়ামটির আসনসংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ হওয়ায় স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত নিরাপত্তাবলয় থাকবে।
‘আই’ গ্রুপ থেকে ৫ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নরওয়ে। ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইতালি। ৫ ম্যাচে ইতালির সমান পয়েন্ট নিয়ে তিনে ইসরায়েল। ১৯৯৮ সালের পর এবারই প্রথম (২০২৬) বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে নরওয়েকে।