Samakal:
2025-09-18@00:17:35 GMT

৫০ কোটির কাজ শেষ না হতেই ধস

Published: 18th, February 2025 GMT

৫০ কোটির কাজ শেষ না হতেই ধস

খুলনার কয়রায় একটি সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্প তিনবার হাত বদল হওয়ায় প্রাক্কলিত মূল্য ক্রমান্বয়ে কমে গেছে। এতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সড়কের দু’পাশ ধসে যাচ্ছে। কয়েকটি স্থানে কার্পেটিংও দেবে গেছে। 
জানা যায়, কয়রা উপজেলা সদর থেকে কাশিরহাট অভিমুখী সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে তিন হাত বদল হয়েছে। প্রতিবার হাত বদলে প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য কমে যাওয়ায় নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সড়কটির দুই পাশে ধসে পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া কয়েক স্থানে কার্পেটিংও দেবে যেতে দেখা গেছে। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিন দফায় কাজ বিক্রি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ হলেও প্রকল্পের কাজ হচ্ছে দায়সারা। জেলা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রকল্প তদারকিতেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখা গেছে। ফলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত কাজ হচ্ছে না।   
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা-কাশিরহাটখোলা সড়কের সাত কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নিয়ে মেসার্স মাহাবুব ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করার অনুমতি পায়। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা কাজটি কিনে নেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি পালিয়ে যান। পরে তিনি আব্দুস সালাম নামে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে কাজটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এ প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের তিন রাস্তার মোড় থেকে বেদকাশি কলেজিয়েট স্কুল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া সড়কের দুই পাশে পুরোনো প্যালাসাইডিং রেখে কাজ শেষ করায় স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ। কয়েক স্থানে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি ও দোকানপাট রেখে কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাশিরহাটখোলা এলাকায় নির্মাণাধীন দুটি কালভার্ট রেখে ৩০০ মিটার সামনের সড়কের দুই পাশ এরই মধ্যে ধসে পড়েছে। এ ছাড়া কাশিরখাল সেতু পার হয়ে উত্তর পাশে প্রায় এক কিলোমিটার অংশে পুরোনো সড়কের ওপর কার্পেটিং করায় তা দেবে যেতে শুরু করেছে।   
বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা উমর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুনতিছি আসল কন্ট্রাকটারের কাছ থেকে দুইবার কাজ বিক্রি হইছে। এক কাজে তিনজন লাভ খাতি গেলি কাজের মান তো খারাপ হবেই। বরাদ্দের টাকাগুলো কয়েন কইরে ছড়ায়ে দিলিও এর চাইতে ভালো কাজ হইতো।’
বেদকাশি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেন, সড়কটি পুনর্নির্মাণের কথা থাকলেও সে নির্দেশনা মানা হয়নি। এ ছাড়া বিটুমিন, পাথরের মান ও মিশ্রণ ভালো না হওয়ায় সড়কটি বেশিদিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সালাউদ্দীন লিটন বলেন, এলাকাটি দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় এখানকার নির্মাণাধীন সড়কগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধির দরকার হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজের নকশায় উচ্চতা কী পরিমাণ থাকার কথা আর কী পরিমাণ করা হয়েছে, তা তারা চাইলেও জানতে পারেন না। কারণ কাজের সাইটে কোনো সাইনবোর্ড নেই। এ ছাড়া মূল ঠিকাদার অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউকে কাজের স্থানে পাওয়া যায় না। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেও তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।  
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন বলেন, একটি কাজ যখন মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে দুই হাত বদল হয়, তখন কাজের মান কেমন হতে পারে, তা ধারণা করা যায়। কারণ সব পক্ষই চাইবে লাভ করতে। তাদের লাভের পাল্লা ভারি করতে গিয়ে কাজের মান খারাপ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। 
তিনি জানান, ২০২০ সালে সড়কের এই অংশে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছিল। তারা যৎসামান্য কাজ করার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা ভেসে যায়। দীর্ঘ ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে কাজ শুরু হলেও কাজের মান ভালো হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আগের ঠিকাদারের করা গাইড ওয়াল ও প্যালাসাইডিংয়ের স্থায়িত্ব কমে গেলেও সেগুলো রেখেই নতুন ঠিকাদার কাজ শেষ করতে চাইছেন।  
জানতে চাইলে প্রকল্পের বর্তমান ঠিকাদার আব্দুস সালাম বলেন, গত ৫ আগস্ট কাজের সাব-কন্ট্রাক্টর পালিয়ে যাওয়ায় মূল প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি তিনি দেখভাল করছেন। প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে।  
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী তামিমুল হক বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে কিনা এ মুহূর্তে বলতে পারছেন না। হাত বদলের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। কাজের মান খারাপ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প র ক জ হ ত বদল সড়ক র হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান