ইসিজি স্বাভাবিক মানে কি হৃদ্রোগ নেই
Published: 21st, February 2025 GMT
হৃদ্রোগ নির্ণয়ে ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আমাদের ধারণা, ইসিজি স্বাভাবিক মানে কোনো হৃদ্রোগ নেই। কিন্তু ইসিজি স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও হৃদ্রোগ থাকতে পারে, এমনকি হতে পারে হার্ট অ্যাটাকও।
হার্টের একটা ইলেকট্রিক সার্কিট আছে, যার মাধ্যমে হার্ট নির্দিষ্ট হারে সর্বদা স্পন্দিত হয়। একটা হৃৎস্পন্দন মানে হার্টের একবার সংকোচন ও একবার প্রসারণ। এ স্পন্দনের একটা গ্রাফিক্যাল চিত্র যখন যন্ত্রের সাহায্যে ধারণ করা হয়, সেটিই ইসিজি। ইসিজি দিয়ে হৃৎস্পন্দনের হার, ছন্দ, হার্টের চেম্বারগুলোর স্বাভাবিক আকার, ইলেকট্রিক সার্কিটে কোনো ব্লক বা বাধা আছে কি না ইত্যাদি ভালো বোঝা যায়।
হার্ট অ্যাটাক হলে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন দুর্বল হয়ে পড়ে। ৭০ শতাংশের বেশি হার্ট অ্যাটাক ইসিজি দেখেই শনাক্ত করা যায়।
মুখ্য বিবেচ্য বিষয় উপসর্গ
হার্ট অ্যাটাকে উপসর্গ হলো মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে বুকের মাঝখানে হঠাৎ ব্যথা, কখনো তীব্র ব্যথা, মনে হচ্ছে কেউ বুক চেপে ধরেছে, বুকের ভেতর প্রচণ্ড ভার অনুভূত হতে পারে। তবে নীরব বা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকও অস্বাভাবিক নয়।
বয়স্ক ব্যক্তি, দীর্ঘদিনের ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রোগী বা স্নায়ুজনিত জটিলতায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যথার অনুভূতি কম হওয়ার কারণে বুকে ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক ছাড়া অ্যানজাইনা বা করোনারি হৃদ্রোগে পরিশ্রম করলে বুকে ব্যথা হয় ও বিশ্রাম নিলে ব্যথা চলে যায়। এ ক্ষেত্রেও বিশ্রামরত অবস্থায় করা ইসিজি স্বাভাবিক পাওয়া যেতে পারে।
কিছু অ্যারিদমিয়া বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের অসুখ আছে, যা স্বল্পস্থায়ী। অ্যারিদমিয়া হলে বুক ধড়ফড় করে। এসব রোগীর উপসর্গহীন অবস্থায় ইসিজি করলে তা স্বাভাবিক পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হার্টের ভালভের কিছু অসুখ ও জন্মগত কিছু হৃদ্রোগে ইসিজিতে তেমন পরিবর্তন না পাওয়া যেতে পারে। কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা হার্টের মাংসপেশির অসুখ, যেখানে হার্ট বড় ও দুর্বল হয়, বিশেষ করে গর্ভকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথির মতো রোগেও ইসিজি স্বাভাবিক হতে পারে। তখন ইকো পরীক্ষার দরকার পড়ে। এসবের মানে শুধু ইসিজির ওপর নির্ভর করেই বলা যাবে না যে হৃদ্রোগ নেই।
করণীয়
বুকব্যথা, হয়রানি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ও অজ্ঞান হয়ে পড়া হৃদ্রোগের প্রধান উপসর্গ। এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দিতে হবে, যতই ইসিজি স্বাভাবিক থাকুক।
বুকব্যথায় অনেকে ইসিজি স্বাভাবিক থাকলে বাড়ি চলে যান। পরে দেখা যায় হার্ট অ্যাটাক ছিল। তাই ইসিজি স্বাভাবিক সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হলে প্রয়োজনে কয়েক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ ও আবার ইসিজি করে দেখার পরামর্শ অবহেলা করা যাবে না। রক্তের ট্রপোনিন পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
যেকোনো বয়সে অল্প পরিশ্রমে হয়রান হওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে শারীরিক পরীক্ষা ও পরামর্শের জন্য যাওয়া উচিত।
ইসিজি স্বাভাবিক হলেও চিকিৎসক ইটিটি, হল্টার বা ইকো পরীক্ষার প্রয়োজন মনে করতে পারেন।
ডা.
শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদ্রোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাডিনোমায়োসিস: নারীদের যন্ত্রণার আরেক নাম
এপ্রিল মাসকে ‘অ্যাডিনোমায়োসিস সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ মাসে বিশ্বজুড়ে মানুষকে অ্যাডিনোমায়োসিস নামক নারীদের বিশেষ এক গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার ব্যাপারে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালানো হয়।
অ্যাডিনোমায়োসিস কী
অ্যাডিনোমায়োসিস হলে জরায়ুর ভেতরের স্তরের (এন্ডোমেট্রিয়াম) কোষগুলো জরায়ুর পেশিতে (মায়োমেট্রিয়াম) অস্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করে। এর ফলে জরায়ুর দেয়াল মোটা হয়ে যেতে পারে এবং হতে পারে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা ও ভারী রক্তপাত।
লক্ষণ
মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা।
ভারী বা অনিয়মিত রক্তপাত।
তলপেটে চাপ বা ভারী অনুভব।
যৌনমিলনের সময় ব্যথা।
ঝুঁকি
অ্যাডিনোমায়োসিসের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন:
বয়স: সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
জরায়ুসম্পর্কিত পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচার: সিজারিয়ান সেকশন করার পর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসাপদ্ধতি
চিকিৎসাপদ্ধতি রোগীর উপসর্গ ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ইবুপ্রোফেন মাসিকের ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হরমোনাল চিকিৎসা: ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন কমবাইন্ড পিল, প্যাচ বা ভ্যাজাইনাল রিং অতিরিক্ত রক্তপাত ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রোজেস্টিন-অনলি কনট্রাসেপটিভ যেমন আইইউডি বা কন্টিনিউয়াস পিল মাসিক বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
হিস্টেরেকটমি: যদি অন্যান্য চিকিৎসায় উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে জরায়ু অপসারণ করা হয়, যা একমাত্র নিশ্চিত চিকিৎসাপদ্ধতি।
উপশম
গরম স্নান বা হিটিং প্যাড ব্যবহার: পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ব্যথানাশক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সচেতনতার গুরুত্ব
অনেক নারী এ সমস্যার মুখোমুখি হলেও ঠিক বুঝতে পারেন না কেন হচ্ছে বা গুরুত্ব দেন না। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে অ্যাডিনোমায়োসিস জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং সমর্থন তৈরি করাই এই মাসের মূল লক্ষ্য।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ, প্রসূতি ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ