নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ কমলেও মেটেনি, দল হবে একটিই
Published: 22nd, February 2025 GMT
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ কমলেও তা একেবারে শেষ হয়নি। এ বিরোধে নেতৃত্ব ঠিক করতে না পারায় নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের দিনক্ষণ ঘোষণা আটকে রয়েছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারিকে দলের আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য সময় বলা হলেও তা দু-এক দিন পেছাতে পারে। তবে দল একটিই হবে, বলছেন নেতারা।
বিবদমান পক্ষগুলোর অংশীদারিত্ব নিশ্চিতে সব পক্ষকে কীভাবে শীর্ষ নেতৃত্বে আনা যায়, তা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য পদের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে। একজনের পরিবর্তে তিন পক্ষ থেকে তিনজনকে সদস্য সচিব করার প্রস্তাব রয়েছে। একাধিক মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠক পদ তৈরির কথাও শোনা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সূত্র সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলোর ভাষ্য, ছাত্র নেতৃত্ব চারটি প্রধান বলয়ে বিভক্ত। একটি বলয়ে রয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি থেকে আসা নেতারা। আরেকটিতে রয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির এবং বিভিন্ন ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতারা। গণঅধিকার পরিষদ এবং বাম সংগঠন থেকে আসা নেতারা অপর দুই দল। আবার এই বলয়গুলোর মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে।
নতুন দলের আহ্বায়ক পদে সব পক্ষই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব ছিলেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গত জুলাইয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত করা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন নাহিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের প্রতিষ্ঠা করা ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ছাত্রশক্তি গড়েন আখতার হোসেন। তিনি বর্তমানে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব। তাঁকে সদস্য সচিব পদে চায় ছাত্রশক্তির নেতাদের বড় অংশ। গত শনিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন তারা। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আসা নেতারাও তাঁকে সমর্থন করছেন বলে জানা গেছে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে নতুন দলের সদস্য সচিব পদে চায় ছাত্রশক্তিরই একটি অংশ। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁকে এ পদে চান বলে আলোচনা রয়েছে। তবে শিবিরের সাবেক নেতারা সদস্য সচিব পদে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদকে চান। তিনি নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
তাদের অভিযোগ, গণঅভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার পরও অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের নতুন দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা রয়েছে; যা আওয়ামী লীগ আমলের শিবির ‘ট্যাগ’ দিয়ে নিপীড়নের ধারাবাহিকতা। অভ্যুত্থানের অবদান নিয়ে পুরো সপ্তাহই বিবাদে জড়ান ছাত্রশক্তি এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এ বাহাসে যোগ দেন।
জানাক সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে বিরোধ কমতে শুরু করেছে। ছাত্রশক্তি এবং গণঅধিকার পরিষদের সাবেক নেতারা এক বলয়ে এসেছেন। শিবির এবং বিভিন্ন ইসলামী ছাত্র সংগঠনের নেতারা, প্রয়োজনে নাগরিক কমিটি থেকে বেরিয়ে পৃথক দল গঠন করবেন বলে যে আশঙ্কা ছিল, তা অনেকটাই কেটেছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি। তিনি সমকালকে বলেন, পেছন থেকে বিরাট ভূমিকা, অবদান ও ত্যাগ থাকলেও, সবাই অভ্যুত্থানে পরিচিতি পাননি। তেমনি নাগরিক কমিটিকে সারাদেশে বিস্তারের জন্য সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতা প্রয়োজন। অভ্যুত্থানে অবদান এবং সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য আলী আহসান জুনায়েদকে সদস্য সচিব পদে চেয়েছিলেন।
রাফে সালমান বলেন, বাংলাদেশে সবার অংশীদারিত্বমূলক মধ্য ডানপন্থি দলের প্রয়োজন রয়েছে বলেই শিবিরের সাবেক নেতারা নাগরিক কমিটিতে যোগ দিয়েছেন। কওমি এবং আলিয়ার আলেমরাও একই উদ্দেশ্যে এসেছেন। তাদের নেতৃত্ববঞ্চিত করা ন্যায্য নয়। এ কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। মতবিরোধ কেটে গেছে। দল একটিই হবে।
ইসলামী ঐক্যজোট থেকে অভ্যুত্থানে আসা আশরাফ মাহাদি নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। সব পক্ষকে নিয়ে চলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একাধিক সদস্য সচিব পদ তৈরিসহ নানা প্রস্তাব রয়েছে। এর কোনোটিই চূড়ান্ত নয়। তবে নাগরিক কমিটির মতোই কাঠামো হতে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সচিব পদ থাকতে পারে। এগুলো ঠিক হওয়ার পর শিগগির দলের ঘোষণা আসবে।
কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, নাহিদ আহ্বায়ক, আলী আহসান জুনায়েদ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, আখতার হোসেন সদস্য সচিব, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সচিব, হাসনাত আবদুল্লাহ মুখপাত্র এবং সারজিস আলম মুখ্য সংগঠক হতে পারেন। তবে একাধিক নেতা বলেন, এটিও চূড়ান্ত নয়। একাধিক মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠক পদ সৃষ্টির আলাপ রয়েছে। এ পদগুলোতে রাষ্ট্রচিন্তা থেকে আসা সামান্তা ইসলাম এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
তবে গতকাল সন্ধ্যায় একাধিক সূত্র জানায়, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিদ্যমান কাঠামোই নতুন দলের কাঠামো হতে পারে। সব পক্ষকে নেতৃত্বে রাখতে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং যুগ্ম সচিবের পদ বাড়ানো হতে পারে। দলে যোগ দিতে নাহিদ ইসলাম কবে সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন তা এখনও ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন নেতারা। নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য জানান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে দলের ঘোষণা আসতে পারে। ঘোষণা আসার দিন বা এর আগের দিন সরকার ছাড়তে পারেন নাহিদ। তবে তাঁর পদত্যাগ গতকাল পর্যন্ত শতভাগ নিশ্চিত ছিল না।
নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত জানান, আগামী ২৩ অথবা ২৪ ফেব্রুয়ারি নাগরিক কমিটির নির্বাহী সভায় দলের নেতৃত্বে কে আসবেন, ঘোষণাপত্র কী হবে– এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত এক ধ ক স গঠন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
গলাচিপায় ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ
পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপির নেতাকর্মীরা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে (ভিপি নুর) অবরুদ্ধ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত ১০টার দিকে গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত ১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ওই বাজারে গিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অন্যদিকে, চর বিশ্বাস বাজারে সরকারি চান্দিনা ভিটির ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট বা ভূমি কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায়ের রশিদ) পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ইসলামসহ দুই পক্ষের ১০ জন আহত হন। পরে চর বিশ্বাস বাজারে ইউনিয়ন বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমীনুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বাজারে দুই শতাধিক দোকান আছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করেন ডিসিআর পাইয়ে দেওয়ার নামে, যা সরকারের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অনেক বেশি। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা নুরুল হক নুরের সহযোগিতা চান। গত ১০ জুন নুর এলাকায় গেলে বিষয়টি নিয়ে দোকানিরা অভিযোগ করেন। তিনি তাদের অতিরিক্ত টাকা না দিতে বলেন এবং প্রশাসনের মাধ্যমে ডিসিআর পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
অভিযোগ অস্বীকার করে চর বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, “আমরা কর্মীসভা করছিলাম। সে সময় ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ও তার লোকজন এসে আলোচনা বন্ধ করতে বলেন। আমরা আলোচনা বন্ধ করলেও অকারণে তারা আমাদের ওপর চড়াও হন এবং চেয়ার ছুড়ে মারেন। এতে আমাদের ৮–১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। ভিপি নুরের শ্যালক এনিম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলে টাকা তুলেছেন। এখন এর দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।”
নুরুল হক নুর বলেছেন, “আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে পাতাবুনিয়া বাজারের বাদল মেম্বারের স্মরণসভায় গিয়েছিলাম। রাত পৌনে ১০টার দিকে সেই স্মরণসভা শেষে গলাচিপা বাজারে ফেরার পথে শুনতে পাই, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের গুড়ি এবং দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পরে আমাদের কয়েকজন কর্মী সেখানে বিষয়টি দেখার জন্য গেলে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এছাড়া, দশমিনার কয়েকটি অফিস তারা ভাঙচুর করেন। হাসান মামুনের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমরা যখনই গণসংযোগ করি, তখনই বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেন। আমাদের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৭০০ নেতাকর্মী ছিলেন। আমরা এ ঘটনা মোকাবিলা করতে পারতাম। কিন্তু, এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্ট হোক, সেটা আমরা চাইনি।”
সার্বিক বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপি নেতা হাসান মামুন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা গণঅধিকারের ঘাড়ে পা দিয়ে বিএনপি অফিস ভাঙচুর করেছেন। হামলাকারী ও হামলার নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
পরে কয়েকটি পোস্টে তিনি ভিপি নুরকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া, তিনি বিএনপি নেতাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক