মিষ্টি পানির সংকট: কম ফলনে হতাশ তরমুজ চাষিরা
Published: 23rd, February 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মিঠাগঞ্জ গ্রামের কৃষক খোকন শিকদার প্রথমবারের মতো ১৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগন জাতের আগাম তরমুজ চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের এক একটি তরমুজের ওজন হয়েছে ১২ থেকে ১৫ কেজি।
ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রিও করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তিনি আরও ১ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। জমির পাশের একটি সরকারি খাল থেকে ক্ষেতে মিষ্টি পানি ব্যবহার করতে পারায় অধিক ফলন পেয়েছেন তিনি।
শুধু খোকন শিকদারই নয়, ক্ষেতে মিষ্টি পানি ব্যবহার করতে পারা তরমুজ চাষিদের অধিকাংশই বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে যেসব কৃষক মিষ্টি পানির অভাবে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করেছেন, তাদের ফলন খুবই কম হয়েছে।
মূলত উপকূলীয় এলাকার খালগুলো ভরাট হয়ে মরে যাওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে কম ফলন পেয়েছেন বলে দাবি কৃষকদের। তাই সরকারি খালগুলো খননের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তরমুজ চাষি খোকন সিকদার বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। আমার ক্ষেতের পাশেই একটি খাল রয়েছে। সেই খাল থেকে ক্ষেতে মিষ্টি পানি ব্যবহার করতে পারায় অধিক ফলন পেয়েছি। তরমুজ চাষে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আশা করছি দেড় লাখ টাকারও বেশি বিক্রি করতে পারব।”
কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটাবাড়িয়া গ্রামের জিয়া কলোনি সংলগ্ন এলাকায় আন্ধারমানিক নদী লাগোয়া জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক ইসমাইল মিয়া। তিনি বলেন, “আমরা ১০ জন কৃষক একত্রে এখানে প্রায় ১৫০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এখানের সরকারি খাল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে ক্ষেতে নদীর পানি ব্যবহার করতে হয়েছে। যে কারণে ফলন কম পেয়েছি এবং তরমুজের আকারও খুব ছোট হয়েছে। তাই কৃষি জমির পাশে যে সকল খাল রয়েছে, সেগুলো খননের দাবি জানাচ্ছি।”
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক সুলতান মিয়া বলেন, “আমরা যারা উপায় না পেয়ে ক্ষেতে নদীর লবণাক্ত পানি ব্যবহার করেছি, তাদের সবার তরমুজের ফলন কম হয়েছে। আমাদের এলাকার অনেক খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ হচ্ছে না। আবার অনেক খাল প্রাকৃতিকভাবে ভরাট হয়ে গেছে। তাই খালগুলো উদ্ধার এবং খননের দাবি জানাচ্ছি।”
কলাপড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, “কলাপাড়ায় এ বছর ৩৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে অনেক খালে পানি না থাকার কারণে কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাই উপকূলীয় এলাকার দখল হয়ে যাওয়া খাল পুনরুদ্ধার এবং খাল খননে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি মিষ্টি পানি ব্যবহার করা কৃষকরা তরমুজ চাষে অধিক লাভবান হবেন।”
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র করত ব যবহ র কর তরম জ র র তরম জ কর ছ ন ফলন প
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র্যাব, চায় সাইবার ইউনিট
অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।
কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।
এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।