খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৬ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল। তারা মৌখিকভাবে কুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন। 

রোববার বিকেলে তারা রাজধানীর ‘যমুনায়’ গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই স্মারকলিপি দেন। 

পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে না ফেরার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, খুলনা থেকে দুটি বাসে করে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহম্মদ ইউনূসের আবাসিক কার্যালয় যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই রমনা থানা থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শহীদ মিনারে অবস্থান নিতে অনুরোধ করা হয়। তারা দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছান। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যান। শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে নতুন নিয়োগ দেওয়াসহ ৬ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন। এছাড়া মৌখিকভাবে কুয়েটের সংঘর্ষ–পরবর্তী সার্বিক অবস্থা তাকে অবহিত করেন।

তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি দেখবেন বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। তাদের বিশ্বাস, সরকার নিশ্চয়ই সংকটের সমাধান করবে। এর আগে সকাল ৮টায় কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৮০ জন দুটি বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাথায় লাল কাপড় বাঁধা ছিল। 

প্রতিনিধি দলটি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান কুয়েট ক্যাম্পাস সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। বিএনপি–ছাত্রদলের লোকজন তাদের অনরবত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। চারজনকে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আই ওয়াশ করতে চাইছে। যারা হামলা করেছে, তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে না। 

খুলনা থেকে যাত্রা শুরুর আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে তারা নিরাপত্তাহীন। এজন্য তাদের দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে করে স্মারকলিপি জমা দিয়ে তারা নিরাপদ জায়গায় চলে যাবেন। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ফিরবেন না তারা। অনলাইনে কার্যক্রম চলবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক বলার চেষ্টা করছেন ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বক্তব্য। হামলাকারীরা স্পষ্ট এবং চিহ্নিত, কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। রক্তাক্ত কুয়েট প্রদর্শনীতে অস্ত্রধারীদের নাম, পরিচয়, ছবি বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছিলেন। এরপর থেকে ৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে– কুয়েটের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ভেতরে ও বাইরে কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না। থাকলে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা দেবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ কুয়েট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা আহতদের তালিকা দেবে। ছাত্রদল ও বিএনপি কর্তৃক কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে মর্মে কুয়েট প্রশাসন থেকে বিবৃতি দিতে হবে। হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সাথে উপাচার্য, উপ–উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে পদত্যাগ করতে হবে। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম রকল প উপ চ র য র ঘটন য় অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ