মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলার যে ভুলের কারণে বড় সাফল্য পেয়েছে গুগল
Published: 25th, February 2025 GMT
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা নিজের জীবন ও কর্মক্ষেত্রের নানা বিষয় অকপটে স্বীকার করার জন্য বেশ আলোচিত। সম্প্রতি ইউটিউবে ডারকেশ প্যাটেল চ্যানেলের পডকাস্টে অংশ নিয়ে নিজের জীবনে করা একটি বড় ভুলের কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এনেছেন সত্য নাদেলা। শুধু ভুল স্বীকারই নয়, এই ভুলের কারণে মাইক্রোসফটের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল বেশ বড় সাফল্য পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সত্য নাদেলা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময় সত্য নাদেলার ধারণা ছিল, ওয়েব–দুনিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ হবে, ফলে ওয়েবসাইটনির্ভর সার্চ নিয়ে আর তেমন ব্যবসা হবে না; অর্থাৎ তিনি বুঝতে পারেননি ভবিষ্যতে সার্চই হবে অন্যতম মূল্যবান ব্যবসায়িক মডেল। আর তাই তিনি ওয়েব সার্চের বদলে অন্যান্য প্রযুক্তি উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন।
নিজের এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে স্বীকার করে সত্য নাদেলা বলেন, ‘আমরা ওয়েব–দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক মডেলের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই ধরে নিয়েছিলাম ওয়েব–দুনিয়া নানাভাবে বিভক্ত হয়ে যাবে। কে ভেবেছিল, সার্চ–সেবাই ওয়েব–দুনিয়াতে শেষ পর্যন্ত বড় বিজয়ী হবে? তবে আমরা যা খেয়াল করিনি, গুগল তা করেছিল। আর তা খুব ভালোভাবে কার্যকর করেছে প্রতিষ্ঠানটি।’
আরও পড়ুনকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চলা প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ কী, জানালেন সত্য নাদেলা২৪ ডিসেম্বর ২০২৪মাইক্রোসফট কীভাবে সার্চ–সেবা নিয়ে ভুল করেছে, তা তুলে ধরে সত্য নাদেলা জানান, কোনো প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সম্পর্কে জানা শুধু যথেষ্ট নয়, নতুন কোনো ব্যবসায়িক মডেলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বেশি চ্যালেঞ্জিং। ব্যবসায়িক মডেলের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানো প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের চেয়ে কঠিন।
সত্য নাদেলা তাঁর কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি বড় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। পুরোনো আমলের মেইনফ্রেম কম্পিউটার থেকে বর্তমানের ব্যক্তিগত কম্পিউটার যুগে প্রবেশের পাশাপাশি ক্লায়েন্ট-সার্ভার আর্কিটেকচারের উত্থান দেখেছেন তিনি। এ বিষয়ে সত্য নাদেলা বলেন, পেছনে ফিরে দেখলে বলতে পারি, আমি চারটি বড় পরিবর্তনের অংশ হয়েছি। একটি হচ্ছে ক্লায়েন্ট ও ক্লায়েন্ট সার্ভার। গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ও এক্স৮৬ আর্কিটেকচারের জন্ম, যা মূলত আমাদের সার্ভার তৈরি করতে দেয়।
১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফট এ বছর ৫০ বছর পূর্তি পালন করছে। এ বিষয়ে সত্য বলেন, এটা বেশ আকর্ষণীয়। আমরা ৫০তম বছর পার করছি। আমি এই যাত্রা নিয়ে চিন্তা করছি। আমি মনে করি, দীর্ঘদিন টিকে থাকা কোনো একটি লক্ষ্য নয়; প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে ও আমাদের দুই হাজার কর্মীকে প্রতিদিন এমন কিছু করতে হবে, যা বিশ্বের জন্য দরকারি ও প্রাসঙ্গিক। আমরা বিভিন্ন কিছু বিকশিত হতে দেখছি, শুধু আজ নয়, আগামীকালের জন্য।
সূত্র: নিউজ১৮
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’