পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় হয় বাংলাদেশে: এনবিআর চেয়ারম্যান
Published: 25th, February 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় হয় বাংলাদেশে। আমরা প্রতিবছর ঋণ করে বাজেট বাড়াচ্ছি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মঙ্গলবার রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন না। ভ্যাট দেয় গ্রাহকরা। বলা হয়, ব্যবসায়ীরা সরকারের হয়ে ভ্যাট আদায় করে সরকারকে দেবেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলে না। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দেন। ফলে আমাদের ঋণ করে বাজেট বড় করতে হয়। এক্ষেত্রে ট্যাক্সের আওতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এনবিআর শুধু অর্থ আদায় করবে। আর এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়সহ অনেক সেবাকে অটোমেশনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌবন্দরে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া দ্রুত চালু ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে মেশিনারি পার্টস আমদানি করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও বগুড়া জেলার ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতারা অংশ নেন।
আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্যের আগে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বর্ধিতহারে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা আসন্ন বাজেটে করের আওতা সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান ব্যবসায় কর, ভ্যাট ও শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।