রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলক চালু শিগগির
Published: 27th, February 2025 GMT
পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শিগগিরই পরীক্ষামূলক চালু করা হবে। প্রকল্পের ড্রাই রান চলছে, খুব দ্রুত টেস্ট রান শুরু হবে।
গতকাল বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ তথ্য জানান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সেই লিখাচেভ। এক দিনের সফরে গতকাল তিনি ঢাকা এসে পৌঁছান।
আলেক্সেই লিখাচেভ বলেন, নিরাপত্তা, গুণগতমান এবং আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের সফল সমাপ্তি নিশ্চিত করতে রোসাটম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে অব্যাহত সহযোগিতা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি এবং আন্তঃসরকার ঋণচুক্তি সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়। এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।
আলোচনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে রোসাটমের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন ড.
রোসাটমের ডিজি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, নির্মাণকাজ পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের যে কোনো সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে পবিত্র।
দুই পক্ষ আন্তঃসরকারি ঋণচুক্তি (আইজিসিএ) সংশোধনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করে। যার আওতায় ঋণ ব্যবহারের সময়সীমা ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে উভয় পক্ষ শিগগিরই আইজিসিএর দ্বিতীয় প্রটোকল সই করতে সম্মত হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সফলতা নিশ্চিত করতে জনবল প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা প্রটোকল ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান স্থানান্তরের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।
রাশিয়ার পক্ষে অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন; রাশিয়ার ফেডারেল এনভায়রনমেন্টাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সুপারভিশন সার্ভিসের ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সেই ফেরোপোন্তভ; রোসাটমের প্রথম উপমহাপরিচালক আন্দ্রে পেত্রোভ এবং রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও এএসই-জেএসির সহসভাপতি আলেক্সেই দেরি।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ করছে রোসাটম।
২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।
গত বছরের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান তুলে দেয় রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৩৩তম সদস্য হিসেবে পারমাণবিক ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি এখন রূপপুরে মজুত আছে।
রূপপুরে বর্তমান কেন্দ্রের পাশেই একই সক্ষমতার আরও দুই ইউনিটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে আলোচনা চলছে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে। এটি হলে ওই দুই ইউনিটের নির্মাণ ব্যয় আগের চেয়ে অনেক কমে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র আল ক স ই র প রথম ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে উত্তাল রাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ বিক্ষোভ করছেন রাবি শাখা ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
চাকসু: ৩ পদ শূন্য রেখে বামপন্থিদের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গাইবান্ধায় নেওয়া হলো খুবি শিক্ষার্থীর মরদেহ
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘ভিক্ষা লাগলে ভিক্ষা নে, পোষ্য কোটা ফিরিয়ে নে’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘২৪-এর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’, ‘জামাই কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগামী ২৫ তারিখের রাকসু নির্বাচনকে পুঁজি করেই শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অবৈধ পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবি তুলেছেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছেন। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যেই এ দাবি সামনে আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাকসুর জিএস পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “পোষ্যকোটার মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগের ফলে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আমরা রাকসু পেতে যাচ্ছি। রাকসুকে জিম্মি করে পোষ্য কোটা নামক অন্যয্য জিনিসকে তারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ পুরাতন মদ তারা নতুন মোড়কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থাকতে, আমরা থাকতে এই পোষ্য কোটা কখনো ফিরে আসতে দেব না। আমরা ২৫ তারিখেই রাকসু চাই এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে পোষ্য কোটা ফিরিয়া আনার চেষ্টা করা হলে আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিহত করব।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এবং রাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “পোষ্য কোটা একটা মীমাংসিত ইস্যু হওয়া স্বত্বেও আবার তা পুনর্বহাল করা হয়েছে এবং এটা প্রশাসনের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৫ তারিখ রাকসু নির্বাচন, এ মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটা দ্বিমুখী অবস্থায় নিয়ে আসা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “রাকসু বানচাল করার জন্য যে গোষ্ঠী কাজ করছে, তারা তাদের সর্বশেষ চেষ্টাটা কাজে লাগানোর জন্য এ পোষ্য কোটাকে কাজে লাগাচ্ছে। আমরা পোষ্য কোটাকে আবার ফিরে আসতে দিতে চাই না এবং রাকসুকে সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই।”
এর আগে, পোষ্য কোটা পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজকের মধ্যে দাবি বাস্তবায়িত না হলে ২১ তারিখ হতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার একটি বৈঠকে এই পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে রাবিতে প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যতম প্রধান শর্তের মধ্যে রয়েছে- স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ পেয়ে পাস করা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী