রমজানের শুরুতেই খুলনায় নিত্য পণ্যের বাজারে আগুন
Published: 2nd, March 2025 GMT
খুলনায় রমজানের শুরুতেই বেড়েছে ইফতার ও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক।
ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চাল, ডাল, ভোজ্য সয়াবিনের দাম। দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা সাঁটানো ও বাজার দর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকলেও কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
রমজান শুরুর আগেই বেড়েছে ইফতার সামগ্রীর দাম। ইফতারের অন্যতম চাহিদায় রয়েছে বেগুন, শসা ও লেবু। চাহিদা বিবেচনায় এই তিনটি পণ্যের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
নগরীর কেসিসির সন্ধ্যা বাজারে প্রকার ভেদে বেগুন কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। শসা কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর মিস্ত্রিপাড়া বাজার, রুপসা বাজার, ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার ঘুরে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজি প্রতি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, লেয়ার ৩২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, পটল ১২০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শীতকালীন সিম ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, খিরাই ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, প্রতিহালি কাঁচকলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ আড়াই কেজি ১০০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, আলু চার কেজি একশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শীতকালীন সিম ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, ক্ষিরই ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৩৫ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এদিকে, মাসের পর মাস চড়া দামে চলছে চালের বাজার। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫৪ টাকা, আঠাশ বালাম ৬৫ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭৫ টাকা, মিনিকেট নিম্নমানের ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা, কালোজিরা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে কমছে না ভোজ্য সয়াবিন তেলের দাম। বোতলজাত ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা সয়াবিন (৫লিটার) বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ টাকা দরে। যা লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। লুজ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খুচরা বাজারে প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা দরে। কমছে না মশুর ডালের দাম। খুচরা বাজার প্রতিকেজি মশুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা, মশুর ডাল (মোটা) ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, মুরগি বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, লেয়ার ২৮০ টাকা, কক ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে গরুর মাংস কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।
কেসিসি সুপার মার্কেটে আসা ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সবজির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল, ডাল, তেল, মুরগিসহ বেশকিছু পণ্য ও জিনিস বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। রমজানেই দাম বাড়ানো হলো জিনিস পত্রের। অথচ কেউ দেখছে না।”
নগরীর সন্ধ্যা বাজারে আসা কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “সবজির দাম বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, সয়াবিন তেলের দাম কোনভাবেই কমছে না।”
তাসলিমা বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, “এ বছর রমজানে বাজার স্বাভাবিক থাকবে ভাবছিলাম কিন্তু চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দামও বেড়ে যাচ্ছে।”
সন্ধ্যা বাজারের বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “খামার থেকে মুরগি কম সরবরাহ হওয়ার কারণে এখন দাম একটু বাড়তি।”
অপর বিক্রেতা মফিজুর রহমান জানান, দুদিনের ব্যবধানে আড়তে পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। সরবরাহ আগের মত রয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকার কারণে আড়ৎদাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সাধারণ ক্রেতার কাছে জবাবদিহিতার শিকার হচ্ছি।
ঢাকা/নুরুজ্জামানান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরবর হ ৮০ ট ক ৩০ ট ক ২০ ট ক ৪০ ট ক রমজ ন নগর র সবজ র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’