গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন: ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশের দল
Published: 2nd, March 2025 GMT
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেটি নবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য কলকাতা সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
সোমবার (৩ মার্চ) কলকাতায় পৌঁছানোর কথা বাংলাদেশের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির। পাঁচ দিনের সফরে তারা কলকাতায় পানি চুক্তি নবায়ন-সংক্রান্ত বৈঠক করবেন; পরিদর্শন করবেন ফারাক্কা বাঁধ।
ভারতের কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম কমিশনার আর আর সাম্ভারিয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে একটি চিঠি লিখে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে বিস্তারিত সূচি জানিয়েছেন। একই চিঠিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
যুবককে নির্যাতন, মৃত ভেবে ফেলে গেল বিএসএফ
‘কেমন সম্পর্ক চায়?’ ভারতের পাল্টা বাংলাদেশের
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গা পানি চুক্তি হয়। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইচ ডি দেব গৌড়া।
গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। তার আগেই এই চুক্তি নবায়ন নিয়ে উভয় দেশে আলোচনা রয়েছে। ২০২৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে শেখ হাসিনার ভারত সফরে গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন নিয়ে কথা হয়েছিল।
ভারতে গঙ্গা নামে পরিচিত নদীটিই বাংলাদেশের পদ্মা নদী। হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশে করে বঙ্গোপসারে মিলিত হয়েছে পদ্মা। ফারাক্কা বাঁধ হওয়ার পর এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরুপ্রান্তরে রূপ নিয়েছে।
চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, পাবনা অংশে শুকনো মৌসুমে পদ্মার বুকজুড়ে বিরাট বালুচর জেগে ওঠে। পানি প্রবাহের সংকটে শুধু পদ্মাই বিলীনপ্রায় হয়নি, পদ্মা থেকে উৎপন্ন অনেক ছোট-বড় নদীও শুকিয়ে হয় সরু খাল, না-হয় মরে গেছে। বাংলাদেশ চায় গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা। এবার আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
আর আর সাম্ভারিয়ার লেখা চিঠি অনুযায়ী, ৬-৭ মার্চ কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের ৮৬তম সভা হবে। তার আগে ৪-৫ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও ভারতের কর্মকর্তারা ফারাক্কা বাঁধ পরিদর্শন করবেন।
যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশের সদস্য মুহম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি কলকাতায় ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন।
কলকাতার মুখ্য সচিবকে লেখা আর আর সাম্ভারিয়ার সই করা চিঠিতে সফরসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ৩ মার্চ সোমবার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি বিমানে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ কলকাতায় পৌঁছানোর পর ওই দিনই ট্রেনে করে তারা ফারাক্কা যাবেন। ৪ মার্চ তারা ফারাক্কায় পানি প্রবাহ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করবেন। পর্যবেক্ষণ শেষে ৫ মার্চ কলকাতায় ফিরবেন তারা। ৬ ও ৭ মার্চ কলকাতায় একটি পাঁচতারকা হোটেলে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে।
গঙ্গার পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে হলেও এই দীর্ঘসময়ে চুক্তিটির সমালোচনা করে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তাদের অভিযোগ, গঙ্গা পানি চুক্তিতে শুধু ভারতের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে; ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের।
গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে বিএনপির অসন্তোষ থাকলেও এবার চুক্তি নবায়নের আলোচনা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার কী ধরনের অবস্থান নেয়, তা নিয়ে কৌতূহল থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞরা এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন দল গঙ্গা থেকে পানি প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসছে। ঢাকার এবার দিল্লির কাছে আগের চেয়ে বেশি পানি চাইবে। সেই দাবি ভারত মানবে কিনা, তা নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ওপর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বহুবার বলেছেন, বাংলাদেশকে অতিরিক্ত দেওয়ার মতো পানি গঙ্গায় নেই। গঙ্গার পানি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চাহিদাই মিটছে না; বাংলাদেশকে আরো পানি কীভাবে দেবেন।
যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি নদী নিয়ে কাজ করে থাকে। গঙ্গা বা পদ্মা তার একটি। গঙ্গা চুক্তি হলেও দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে সেই চুক্তি আজো হয়নি। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে সম্প্রতি তিস্তা পাড়ে সমাবেশ করে বিএনপি, তাতে যোগ দেয় উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বৈঠকে তিস্তা ইস্যু নিয়ে উত্তাপ ছড়ায় কিনা, তাও দেখার বিষয়।
তিস্তা চুক্তি নিয়েও ঘোর আপত্তি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সম্মত হয়ে কয়েক দফায় তিস্তা চুক্তি করার প্রস্তুতি নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারে মমতার বাগড়ার কারণে।
তিস্তা পানি চুক্তি করা না গেলেও ২০২৪ সালে সামনে আসে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বা তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের বিষয়টি। চীনের ঋণে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা এগিয়ে গেলেও ভারত তাতে বাগড়া দেয়। শেষমুহূর্তে শেখ হাসিনা সরকারও ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অবশ্য গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর সেই আলোচনা আর এগোয়নি।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ কলক ত য় ব এনপ সরক র করব ন হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি