ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় সালিস বসালেন বিএনপি নেতা
Published: 3rd, March 2025 GMT
নোয়াখালীতে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় সালিস বৈঠক করেছেন স্থানীয় এক বিএনপির নেতা। বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মো. আলী। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠকে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে মো.
বৈঠকে জরিমানার টাকা এক দিন পরে দেবেন জানিয়ে অভিযুক্ত যুবককে কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন তাঁর বাবা। পরে ওই যুবকের মা–ও ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন। এরপর ওই যুবক সালিস থেকে চলে যান।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি গত শনিবার বিকেলে ধারণ করা। ওই দিন সকালে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনাটি ঘটে। সাত বছরের ওই শিশুকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এ সময় চিৎকার শুনে এলাকাবাসী শিশুটিকে উদ্ধার করলেও অভিযুক্ত যুবক পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর বিকেলে এলাকায় বিষয়টি নিয়ে সালিস বসে।
ভুক্তভোগী শিশুর মা প্রথম আলোকে বলেন, এক প্রতিবেশী তাঁর মেয়েকে উদ্ধারের পর পুরো ঘটনা তাঁকে জানান। তিনি স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করে এ বিষয়ে সহযোগিতা চান। এরপর বিকেলে এলাকায় সালিসের আয়োজন করে তাঁকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘২০ হাজার টাকা জরিমানা ও হালকা কয়েকটি বেত্রাঘাতের সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়নি। তাই গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এরপর আমাকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত যুবকের পরিবার এলাকায় খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাপত্তার শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন দেশে দলীয় সরকার নেই, কল দিলে ঠিকমতো পুলিশ পাওয়া যায় না, তাই প্রতিবেশী হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিতে চেয়েছি। এটি করা ঠিক হয়নি। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য সালিসের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত তরুণকে আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সালিসের ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ঘটনাটি জানার পরই অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে। সাড়া দিতে পুলিশ কোনো বিলম্ব করেনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের বলেন, সালিসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার মীমাংসা করা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার শামিল। এ ধরনের কার্যক্রমে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী যুক্ত হন, তবে তাঁরাও অপরাধী। প্রচলিত আইনেই এ ধরনের অপরাধের বিচার হতে হবে। সালিসের মাধ্যমে এসব ঘটনা মীমাংসা হলে মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবে, সালিস বাণিজ্য বাড়বে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ষ ট র ঘটন ব এনপ ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা
চিরসবুজ অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ৭১ বছর পূর্ণ করলেন সত্তরের দশকের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী। জন্মদিন উপলক্ষে গত বছর একটি সাক্ষাৎকার দেন ববিতা। এ আলাপচারিতায় জীবনবোধ নিয়ে কথা বলেন এই শিল্পী।
জীবন নিয়ে ববিতা বলেন, “যে জীবন মানুষের কোনো উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়। মরে গেলে আমার ছেলে অনিক আমাকে অনেক মিস করবে। একমাত্র ছেলে তো, ওর কথা খুব ভাবি। ভক্তরা আমাকে কতটুকু মনে রাখবেন, জানি না।”
একটি ঘটনা উল্লেখ করে ববিতা বলেন, “এই জীবনে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে। অনেক শিল্পীকে তা দেওয়া হয়নি, হোক তা ভারতে কিংবা বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের মেয়র আজীবন সম্মাননা দিয়েছেন। সেদিন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সম্মান দিয়েছেন, ৬ আগস্টকে ‘ববিতা ডে’ ঘোষণা করেছেন। তার মানে আমি বেঁচে না থাকলেও দিনটা উদযাপিত হবে। এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”
আরো পড়ুন:
বধূবেশে অভিষেক কন্যা
জসীম পুত্রের মৃত্যু: ভাই রাহুলের আবেগঘন পোস্ট
মৃত্যুর কথা স্মরণ করে ববিতা বলেন, “তবে কবরে একা থাকার কথা ভাবলে হঠাৎ কেমন যেন লাগে। আরেকটা বিষয়, আমি অনেক দিন বেঁচে থাকতে চাই না। অসুখ–বিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না। আমি কারো বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না।”
কারণ ব্যাখ্যা করে ববিতা বলেন, “চারপাশে অনেক আত্মীয়স্বজনকে দেখেছি, দিনের পর দিন বিছানায় অসুস্থ হয়ে কষ্ট পেয়েছেন। যারা একা থাকেন, তাদের জন্য এই কষ্ট যেন আরো বেশি। তাই সব সময় এটা ভাবি, কখনোই যেন অন্যের বোঝা না হই।”
সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা ববিতার কখনো ছিল না। পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও প্রথমে রাজি হননি। পরে মা আর বোনের পীড়াপীড়িতে অভিনয় করেন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারফ্লপ হয়।
পরিচালক জহির রায়হান আবারো ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’ উর্দু সিনেমার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে বললে প্রথমে রাজি হননি ববিতা। তখন বয়স মাত্র ১৪। কিন্তু সিনেমার বেশির ভাগ শুটিং হওয়ার পরও শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে না পারায় সিনেমাটি আর শেষ করা হয় না।
এরপর জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে বাংলা সিনেমা বানান। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারহিট হয়। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সিনেমা হিট হওয়ায় আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। এরপর ‘স্বরলিপি’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমায় জুটি বাঁধেন রাজ্জাক-ববিতা। প্রতিটি সিনেমাই সুপারহিট।
ঢাকা/শান্ত