নোয়াখালীতে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় সালিস বৈঠক করেছেন স্থানীয় এক বিএনপির নেতা। বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মো. আলী। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈঠকে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে মো.

আলী বলছেন, ‘সবার সম্মতিক্রমে কোর্ট-কাচারির দিকে না গিয়ে আমাদের এখানে রায় হয়েছে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০টি বেত্রাঘাত দিবেন অভিভাবকেরা।’

বৈঠকে জরিমানার টাকা এক দিন পরে দেবেন জানিয়ে অভিযুক্ত যুবককে কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন তাঁর বাবা। পরে ওই যুবকের মা–ও ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন। এরপর ওই যুবক সালিস থেকে চলে যান।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি গত শনিবার বিকেলে ধারণ করা। ওই দিন সকালে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনাটি ঘটে। সাত বছরের ওই শিশুকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এ সময় চিৎকার শুনে এলাকাবাসী শিশুটিকে উদ্ধার করলেও অভিযুক্ত যুবক পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর বিকেলে এলাকায় বিষয়টি নিয়ে সালিস বসে।

ভুক্তভোগী শিশুর মা প্রথম আলোকে বলেন, এক প্রতিবেশী তাঁর মেয়েকে উদ্ধারের পর পুরো ঘটনা তাঁকে জানান। তিনি স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করে এ বিষয়ে সহযোগিতা চান। এরপর বিকেলে এলাকায় সালিসের আয়োজন করে তাঁকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘২০ হাজার টাকা জরিমানা ও হালকা কয়েকটি বেত্রাঘাতের সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়নি। তাই গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এরপর আমাকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত যুবকের পরিবার এলাকায় খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাপত্তার শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন দেশে দলীয় সরকার নেই, কল দিলে ঠিকমতো পুলিশ পাওয়া যায় না, তাই প্রতিবেশী হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিতে চেয়েছি। এটি করা ঠিক হয়নি। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য সালিসের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত তরুণকে আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সালিসের ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ঘটনাটি জানার পরই অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে। সাড়া দিতে পুলিশ কোনো বিলম্ব করেনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের বলেন, সালিসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার মীমাংসা করা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার শামিল। এ ধরনের কার্যক্রমে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী যুক্ত হন, তবে তাঁরাও অপরাধী। প্রচলিত আইনেই এ ধরনের অপরাধের বিচার হতে হবে। সালিসের মাধ্যমে এসব ঘটনা মীমাংসা হলে মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবে, সালিস বাণিজ্য বাড়বে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ষ ট র ঘটন ব এনপ ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়