সিন্ডিকেটের কবলেই থেকে গেল সিলেটের ভোজ্যতেলের বাজার। রমজানে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও তেল নিয়ে চলছে তেলেসমাতি।
স্থানীয় পর্যায়ের দোকানগুলোতে তেল মিলছে না। পাইকারি বাজারেও তেলের দেখা মেলা কঠিন। পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ব্র্যান্ডের তেল নেই বাজারে। নতুন নামে বিভিন্ন তেলের কোম্পানি বাজারে এলেও এতে আস্থা রাখতে পারছেন না ক্রেতারা। এছাড়া এসব তেলের দামও বেশি। কোনো কোনো তেল মাপে প্রায় একশ গ্রাম কম আসছে লিটারে।
গত শনিবার থেকে টানা কয়েকদিন সিলেট নগরীর খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটাই সহনীয়। তবে বাজার থেকে হাওয়া সয়াবিন তেল। খুচরা বাজারে আলু ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১২০ টাকা, দেশি চিনি ১৩০ এবং ভারতীয় চিনি ১১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবজির বাজারও অনেকটা সহনীয়। গেল বছর খেজুরের দাম ছিল অনেকটা বেশি। এবার বাজারজুড়ে দেখা মিলছে খেজুরের। দামও সহনীয়।
নগরীর প্রধান পাইকারি বাজার কালীঘাটে গিয়ে দেখা যায় লোকজনে ঠাসা। বাজারে সব পণ্যই মিলছে। নেই শুধু সয়াবিন তেল। দোকানদারদের অভিযোগ, তারা ডিলারদের কাছে তেল দেওয়ার চাহিদা দিয়ে রেখেছেন। ডিলাররা তাদের তেল দেননি। কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন বলেও তারা দাবি করেন।
কালীঘাটের মদিনা ট্রেডার্সের আবদুল মালিক জানান, কয়েকদিন ধরেই তারা রয়েছেন মহাসংকটে। রমজানে নিত্যপণ্যের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে ভোজ্যতেল। সেটি তারা ক্রেতার চাহিদা মতো দিতে পারছেন না। কিছু কিছু দেওয়া গেলেও দাম চড়া। এছাড়া ব্র্যান্ডের তেল বাজারে নেই। বিভিন্ন নামে বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এসব তেল নিতে চান না। যারা নিচ্ছেন তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই নিচ্ছেন।
নগরীর নয়াসড়ক গির্জার সামনে একটি কাভার্ডভ্যানে দেখা গেল নিত্যপণ্য বিক্রি করতে। আটা, ময়দা, মসুর ডাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে ভ্যানে। সেখানে মোটা ডাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। তীর কোম্পানির সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২ লিটার ৪০০ টাকায়। এছাড়া প্যাকেটজাত কলি কোম্পানির পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ২ লিটার ১৭০ টাকা।
নগরীর আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, উপশহর টিলাগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায়ও সয়াবিন তেল নেই। পাড়ার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে পামঅয়েল। পামঅয়েলও অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এলাকার লোকজন।
নগরীর টিলাগড়ের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, তাঁর ৫ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদা ছিল। এজন্য তিনি কালীঘাটে যান। সেখানে গিয়ে নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির তেল দেখতে পান। ভরসা করতে না পেরে ৫ লিটার রাইসবেন তেল এক হাজার ২০০ টাকায় কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, এখন সব তেলের দাম চড়া। অন্যান্য পণ্যে বাজার অনেকটাই সহনীয়।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) সিলেটের সমন্বয়ক তালুকদার মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত যপণ য ভ জ যত ল নগর র সহন য়
এছাড়াও পড়ুন:
করের চাপ কমানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে করের চাপ কমানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলছেন, করজাল বৃদ্ধি না পাওয়ায় যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপরই করের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি করহারের চেয়েও প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি কর দিতে হয় তাঁদের। এ ছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের যে হয়রানি করেন, তা বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় এ দাবিগুলো জানান বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। এনবিআর এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বুধবার এই সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
পরামর্শক সভায় বিভিন্ন খাতের প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী নেতা বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য নানা দাবি তুলে ধরেন। শুরুতে এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের করদাতাদের জন্য এই সীমা পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো জরুরি। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের নিত্যপণ্য কিনতে আয়ের বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিদ্যমান করকাঠামো তাঁদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
এ ছাড়া পণ্য রপ্তানিতে পাঁচ বছরের জন্য উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ করা, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, স্থানীয় পর্যায়ে সব পণ্য সরবরাহে মূসক ২ শতাংশ নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে এইচএস কোডে ভুলের জন্য জরিমানার যে বিধান আছে, সেটি বাতিলের সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
অন্যদিকে বাজেটে করহার না কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, করহার আর কমানো সম্ভব নয়। তবে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা থাকবে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সব কথা হয়তো শুনতে পারব না। কারণ, সরকারের রাজস্ব আয় কমানো যাবে না। সরকার চালাতে রাজস্বের প্রয়োজন।’
করজাল বাড়ানোর ওপর জোরকরজাল বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, করজাল বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। দেশে ১ কোটি ১৪ লাখ করদাতা রয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫ লাখ রিটার্ন দেন, যাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য রিটার্ন জমা দেন। ফলে এখানে গুণগত পরিবর্তন দরকার। করজাল না বাড়িয়ে বর্তমান করদাতার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এতে রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে করদাতাদের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট হয়।
সরকারের মোট রাজস্ব আহরণের ৮৪ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসে—এমন তথ্য দিয়ে ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি রাজীব চৌধুরী বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে কর আহরণ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ দেশের অর্থনীতিতে ৬০-৭০ শতাংশ অবদানই এই খাতের।
তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান রাঙামাটি চেম্বারের প্রতিনিধি বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, মানুষের মন থেকে করভীতি দূর করতে হবে। তাহলে স্বচ্ছন্দে কর দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
গ্যাস-বিদ্যুৎ চান ব্যবসায়ীরাকুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেও গ্যাস–বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরাসহ অনেকেই কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) বিনিয়োগ করেছেন। আমরা ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছি। তবে দুই বছরেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি। অথচ নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানিসংকটে ভুগছেন। এটা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।’
মোস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাই করজাল বাড়ানোর কথা বলেছেন। বাস্তবতা হলো, যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপর আরও বেশি করের চাপ আসে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকের ব্যাংক হিসাব ও করনথি তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে তল্লাশি করে ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি করা না হয়, সে জন্য এনবিআরকে অনুরোধ জানান।
সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সিরামিক খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সিরামিক পণ্যের মূল কাঁচামাল হিসেবে যে মাটি আমদানি করা হয়, তার মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ পানি থাকে। এটি বাদ দিয়ে শুল্কায়ন করা হলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।’
ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমানোর দাবিফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমিয়ে ৯ শতাংশ করার দাবি জানান আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের পরিচালক আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, বর্তমানে ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি সর্বমোট ১৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এটি কমানো গেলে গ্রাহকেরা ফ্ল্যাট নিবন্ধনে আগ্রহী হবেন।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘নিবন্ধন ফি কমানোর ক্ষেত্রে জমি বা ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে বড় সমস্যা। এটা ঠিক করা গেলে নিবন্ধন ফি ৯ শতাংশ করা হলেও সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। এটার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। হয়তো একদিন সফল হব।’
নির্মাণ খাতের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান ইস্পাতশিল্পে সরকারের বিশেষ নজর দাবি করেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম। তিনি বলেন, ‘কাস্টমসের অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। এক টন স্ক্র্যাপ আনতে ১ হাজার ২০০ টাকা কর দিই। কিন্তু চালানে কোনো স্ক্র্যাপ ৫-৭ ফুট দীর্ঘ হলেও হয়রানি করা হয়। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হয়। এখান থেকে বের হতে হবে।’
শুল্ক কমান, রপ্তানি বাড়বেপ্লাস্টিকের খেলনা তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান আমদানিতে শুল্ক কমানো হলে রপ্তানি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, খেলনাশিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। দেশে কারখানা গড়ে ওঠায় খেলনা আমদানি কমে গেছে। রপ্তানিও হচ্ছে অনেক দেশে।
সিলেট চেম্বারের প্রতিনিধি হিসকিল গুলজার বলেন, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। সেখান থেকে দিনে ১২-১৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যাচ্ছে। হ্যান্ডলিং চার্জসহ অন্যান্য মাশুল কমানো গেলে পণ্য রপ্তানি বাড়বে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। তিনি বলেন, ‘একসময় যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে বিটিএমএ ছাড়পত্র দিত। কোনো বিতর্ক হয়নি। এনবিআর পুরো বিষয়টি নিজের হাতে নেওয়ার পর জটিলতা বেড়েছে। দেখা যায়, ৩০ হাজার টাকা শুল্ক–কর জমা দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।’
ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে সুতা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন।
নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান প্রশাসন বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সেবা মসৃণ হয়েছে। তবে বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ের নিচের দিকে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। সেখানে নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু।