সরকারকে এই নতুন বাংলাদেশের স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক কল‌্যাণ ট্রা‌স্টের ব‌্যবস্থাপনা প‌রিচালক সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ।

রবিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর বিজয়নগ‌রে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আ‌য়ো‌জিত গণইফতার কার্যক্রমের ৮ম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.

মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণইফতারে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার ফারুক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম আব্দুল্লাহ বলেন, একটি অসাধারণ ঘটনার সাক্ষী হওয়ার জন্য আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি। এখানে উপস্থিত সকলের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বেশিরভাগই শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইফতার মাহফিলে গিয়ে আমরা দেখি এক রাজনীতি আর এখানে এসে দেখলাম এক নতুন রাজনীতি। যেটা এবি পার্টির সেবা ও সমস্যা সমাধানের রাজনীতি। ছিন্নমূল মানুষের জন্য এই ধরনের গণইফতার আয়োজন করা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। 

তিনি সরকারকে নতুন বাংলাদেশে গণমানুষের অনুভূতি বুঝে কাজ করার আহ্বান জানান। 

সভাপতির বক্তব্যে পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, আমাদের দেশে ধনী গরীবের এই যে ফারাক, ব্যবধান এটা আমরা চাই না। এখনো মানুষ উচ্ছিষ্ট থেকে খাবার কুড়ায়, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এই দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। আপনাদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করছে এবি পার্টি।

আলোচিত শিশু ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মাঠে থাকতে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

গণ ইফতার অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন রানা, এবিএম খালিদ হাসান, এবি যুব পার্টির সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মুহাম্মদ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবা ও জনকল্যাণবিষয়ক সহ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, কেফায়েত হোসাইন তানভীর, যুবপার্টির দপ্তর সম্পাদক আমানুল্লাহ সরকার রাসেল, নারী উন্নয়ন বিষয়ক সহ সম্পাদক শাহিনুর আক্তার শিলা, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, শরন চৌধুরী, সহ অর্থ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ও সহ প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, আজাদুল ইসলাম আজাদ, পল্টন থানার আহ্বায়ক মুন্সি আব্দুল কাদের, যাত্রাবাড়ী থানা আহ্বায়ক আরিফ সুলতান সহ কেন্দ্রীয়, মহানগরী, যুবপার্টি ও ছাত্রপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ