বিচার-সংস্কার দাবিতে দ্রুত রাজপথে নামার ঘোষণা এনসিপির
Published: 10th, March 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা ও নির্যাতনকারীদের বিচার এবং সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা ও সংস্কারের দাবিতে শিগগির রাজপথে নামবেন তারা। সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের নিয়ে দলের ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেছেন। নাহিদ বলেন, শহীদ পরিবার শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের আসামি করে শত শত মামলা করেছে। যদি এর বিচার ছাড়া আরেকটি সরকার চলে আসে তাহলে কী নিশ্চয়তা আছে, আওয়ামী লীগকে আবার এই বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করা হবে না? অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে আওয়ামী লীগের ফয়সালা কী হবে।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ করা হচ্ছে আমরা নাকি নির্বাচন পেছানোর রাজনীতি করছি। খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য এত তাড়াহুড়া করে, ভোট চাইতে গেলে কিন্তু সেই জবাবদিহি তাদের দিতে হবে।’ কতদিনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম হবে এবং সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে তার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমরা তা ধরে রাখতে চাই। আমরা কেউ নির্বাচনের বিরুদ্ধে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলেই নিজেরা দল গঠন করেছি। কিন্তু আমরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলেছি গণপরিষদ নির্বাচন, কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সংবিধান অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কারও ওপর নির্ভর করতে চাই না, তাই নিজেরাই মাঠে নেমে দাবি বাস্তবায়ন করতে চাই। শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের মনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের সবার বুঝতে হবে। তিনি আরও বলেন ৫ আগস্ট দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। দেশে ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আর কোনো জায়গা হবে না। দেশে মব তৈরির রাজনীতির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইসলাম ধর্মকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা-ষড়যন্ত্র অনেক গ্রুপ করছে। আমরা সেগুলো প্রতিহত করব।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে নির্বাচন চাই, কিন্তু যে খুনি হাসিনার হুকুমে এতগুলো প্রাণ গেছে সেই খুনির বিচার হওয়ার আগে কোন মুখে শুধু নির্বাচনের কথা বলে? বিচার না চেয়ে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাচনের কথা বলতে লজ্জা লাগে না?’
ইফতার অনুষ্ঠানে শহীদ জাবির ইবরাহীমের বাবা নওশের আলী বলেন, খুনিদের বিচারের আগে কোনো রকম নির্বাচন চাই না। আগে বিচার হবে তারপর সংস্কার হবে। আমরা আর চব্বিশ, নব্বই, একাত্তরের রক্তক্ষরণ চাই না।
আশুলিয়ায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের ছেলেদের লাশ ভ্যানে স্তূপ করে রেখে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আমরা মা, আমরা কীভাবে মেনে নিতে পারি, কত কষ্ট করে সন্তানকে বড় করেছি। সেই সন্তানকে কুকুর-বিড়ালের মতো কীভাবে মারা হলো। আমার সন্তানকে মারার উত্তর না খোঁজা পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
ইফতার অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনীম জারা, আহত আসিফ শাহরিয়ার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন এনস ব র জন ত এনস প আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই সনদ হতে হবে, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। নির্বাচিত যে সরকার আসুক এই সদন বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকবে।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজীপুরের রাজবাড়ি সড়কে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে। এর বিকল্প আমরা দেখতে চাই না। সরকার সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে। জুলাই সনদ শুধু সংস্কার হলে হবে না, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে ঐক্যমত হতে হবে।”
আরো পড়ুন:
ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, ৫ আগস্টের আগেই অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে পারবেন। আমরা সবাই মিলে আকাঙ্ক্ষিত গণঅভ্যুত্থানের একবছর উদযাপন করতে পারব।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, মো. মহসিন উদ্দিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের সাবেক আহ্বায়ক নাবিল আল ওয়ালিদ।
এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন মোড়ে ও সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হয়। রাজবাড়ীর সড়কে বন্ধ থাকে সব ধরনের যান চলাচল।
এর আগে, এনপিপির কেন্দ্রীয় নেতরা টাঙ্গাইলের পথসভা শেষে গাজীপুরে কালিয়াকৈরে উপজেলা হয়ে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা যান। সেখানে বিকেলে পথসভা শেষে গাজীপুর শহরের রাজবাড়িতে আসেন তারা।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ