ভোলার মনপুরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উপজেলার হাজিরহাট বাজারে এ সংঘর্ষ চলে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভোলা-৪ (মনপুরা-চরফ্যাশন) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নাজিম উদ্দিন আলম ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শীসহ একাধিক সূত্র জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় মনপুরা উপজেলা মিলনায়তনে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। ইফতার শেষে অতিথিদের চলে যাওয়ার সময় নুরুল ইসলামের সমর্থকেরা সেখানে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসেন। নুরুলের সমর্থক উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদারের নেতৃত্বে এ মিছিলে ‘এক-এগারোর দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে দিতে হাজিরহাট বাজার প্রদক্ষিণ করা হয়। এ সময় নাজিম উদ্দিনের কয়েকজন সমর্থককে কুপিয়ে-পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠে। এ সময় নাজিম উদ্দিনের সমর্থকেরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় নাজিম উদ্দিন পক্ষের আবদুর রহিম, সোহেল, আবদুর রহমান, আবুল কাশেম, শাহিন, দুলাল, বেলালসহ ৯ জনকে কুপিয়ে-পিটিয়ে আহত করা হয়। সেই সঙ্গে নুরুল ইসলাম পক্ষের রুবেল, সাব্বির, হোসেন হাওলাদার, ইব্রাহিম খলিল, মিলন, আছিফ, তাসরিফ, স্বপনসহ আটজন আহত হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিম উদ্দিন ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, তাঁরা সন্ধ্যায় সফলভাবে ইফতার পার্টি করেন। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদার, যিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে সুবিধা গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর জামাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান (সদ্য সাবেক) জাকির হোসেনের অদৃশ্য ইঙ্গিতে আওয়ামী-যুবলীগ কর্মীরা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের কুপিয়ে-পিটিয়ে জখম করেছেন। এক দফায় হাজিরহাট বাজারে হামলা হয়েছে। ওই হামলায় আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে গেলে আরেক দফায় হাসপাতালেও হামলা করা হয়।

নিজেদের বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রকৃত কর্মী দাবি করে আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা নাজিম উদ্দিন আলমের মতো সংস্কারপন্থী বিএনপি বা আওয়ামী লীগ নন। আমরা দালালদের উৎখাত চেয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছি। আমাদের ওপরই নাজিম পক্ষ প্রথম হামলা করে। পরে আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। আমাদের অন্তত ৮ থেকে ৯ জন আহত হয়েছেন।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর বলেন, সংঘর্ষের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে নিজেদের মধ্যে এভাবে সংঘর্ষে জড়ানো ঠিক না, যা দলের জন্য ক্ষতিকর।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান কবীর জানান, এক পক্ষের অভিযোগ পাওয়া গেছে, অন্য পক্ষের অভিযোগ আসছে। দুই পক্ষের অভিযোগ গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র জন আহত স ঘর ষ আওয় ম র সমর সময় ন ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ