বাগেরহাট পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক দলের নেতা আবুল কাশেম ভূঁইয়ার ভাই আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। আবুল কাশেম ভূঁইয়া বাগেরহাট পৌর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি। তাঁর ভাই আজিম ভূঁইয়াও শ্রমিক দল নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে দলীয় পদ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল বুধবার রাতে বাগেরহাট পৌর শহরের বাসাবাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় জসিমকে উদ্ধার করে প্রথমে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে খুলনায় পাঠানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে যুবদল নেতাকে কোপানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজনের খোঁজে গতকাল বুধবার রাতে শহরে সশস্ত্র মহড়া দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আবুল কাশেম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে হামলা, মারধর, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে। এর আগে বাস টার্মিনালের দখল নিয়ে আবুল কাশেম ভূঁইয়ার পক্ষের লোকজনকে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় শ্রমিক দল নেতা আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন শহরের নাগেরবাজার এলাকায় যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের প্রতিবেশী আজিম খানকে মারধর করেন। রাত আটটার দিকে বাসাবাটি এলাকার বগা ক্লিনিকের সামনে আজিম ভূঁইয়ার কাছে মারধরের কারণ জানতে চান জসিম উদ্দিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন জসিমের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। প্রাণ বাঁচাতে জসিম স্থানীয় মজিদ কসাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তখন ওই বাড়ির ফটক ভেঙে জসিমকে বের করে বেধড়ক পেটানোর পাশাপাশি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

আহত যুবদল নেতার মামাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু মারধরের কারণ জানতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন জসিমকে কুপিয়েছে। ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মজিদ কসাইয়ের ঘরে লুকিয়েও জসিম রক্ষা পাননি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা খুলনা থেকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে আসছি।’

মারধরের শিকার আজিম খানের স্ত্রী নাদিরা বেগম বলেন, ‘আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন আগেও আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েছে। গতকাল আমার স্বামীকে মেরেছে। মারধরের কারণ জানতে চাওয়ায় জসিম কাকাকে মেরেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

তবে এ ঘটনায় আবুল কাশেম ভূঁইয়া বা আজিম ভূঁইয়া পক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে এ ঘটনায় আজ দুপুরে বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় আজিম ভূঁইয়ার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ উল হাসান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল ন ত র ল কজন ম রধর র এ ঘটন য় আজ ম ভ দল ন ত গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ