ঈদ সামনে রেখে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিলেটের দরজির দোকানের কারিগরেরা। রমজান মাস শুরুর পর থেকেই এমন ব্যস্ততা বেড়েছে দোকানে দোকানে। কাজের চাপ কিছুটা বাড়লেও আগের বছরগুলোর তুলনায় তা কম বলে জানিয়েছেন কারিগরেরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার কয়েকটি দরজির দোকান ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। টেইলার্স মালিক ও কারিগরেরা বলছেন, একসময় ঈদের ১৫ দিন আগেই নতুন জামা তৈরির ফরমায়েশ (অর্ডার) নেওয়া বন্ধ করা হতো। কয়েক বছর ধরে চাপ কম। এবার ঈদের দুই দিন আগ পর্যন্তও নতুন ফরমায়েশ নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া কাপড় সেলাইয়ের মজুরি নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। গ্রাহকেরা বলছেন, আগের তুলনায় জামা তৈরির খরচ বেড়েছে। তবে কারিগরেরা বলছেন, টেইলার্স মালিক মজুরি বাড়ালেও কারিগরেরা খুব একটা বাড়তি মজুরি পাচ্ছেন না।

প্রায় ২৩ বছর আগে একটি টেইলার্সে কারিগর হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আবদুল মতিন। বর্তমানে জিন্দাবাজার এলাকার শুকরিয়া বিপণিবিতানের আলীম পাঞ্জাবি টেইলার্স নামের তার নিজের টেইলার্স রয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দোকানে বর্তমানে পাঁচজন কারিগর কাজ করেন। এখানে শুধু পাঞ্জাবি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। আগে বৈদ্যুতিক সেলাইযন্ত্র ছিল না, তখন কারিগর বেশি ছিল। এখন বৈদ্যুতিক যন্ত্র থাকায় কম কারিগর দিয়ে কাজ করাতে পারছেন। তবে কাজ আগের তুলনায় কমেছে। দুই–তিন বছর আগেও ১০ রমজানের পর থেকে বিপণিবিতানগুলোতে হাঁটাচলা করতে ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি লেগে যেত। এখন এমন চিত্র দেখা যায় না।

দরজির দোকানগুলো ঘুরে জানা গেছে, তরুণ–তরুণী ও শিশুদের বিভিন্ন কাপড় ২০০ থেকে ২০০০ টাকায় সেলাই করা হচ্ছে দোকানগুলোতে। এর মধ্যে ছেলেদের বেশির ভাগই পাঞ্জবি ও শার্ট। নারীদের ক্ষেত্রে থ্রি–পিস, ব্লাউজ ও টপসের ফরমায়েশ বেশি আসছে।

সিলেটের বিভিন্ন টেইলার্সে নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান

১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।

কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!

দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।

কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।

আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।

অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।

এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।

একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।

বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান

সম্পর্কিত নিবন্ধ