নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল দশটায় শহরের মিশন পাড়া হোসিয়ারি কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গনে এই সভার আয়োজন করা হয়। 

জানাগেছে, সভায় মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে যাদেরকে রাজপথে দেখা যায়নি এবং যারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিল তারাই এখন নিজেকে বিএনপি সক্রিয় কর্মী হিসেবে দাবি করছেন। 

শুধু তাই নয় ফ্যাসিবাদের দোসর ও অনুপ্রবেশকারীদেরকেও আশ্রয়- প্রশ্রয় দিচ্ছে কিছু নেতারা। তারা অনুপ্রবেশকারীদেরকে কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাদেরকে মূল্যায়ন করছে আর যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে যে সকল নেতাকর্মীরা রাজপথে তাদের নিজের জীবন পর্যন্ত বাজিয়ে রেখে হামলা মামলা ও জেল নির্যাতনের স্বীকার করে দলের জন্য কাজ করেছে তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। 

তারা আরও বলেন, আমরা যারা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছি আমাদের কোনো ফেস্টুন ব্যানার নেই। আর অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীরা বড় বড় নেতাদের ছবি দিয়ে ফেস্টুন ব্যানারে পুরো মহানগর এরিয়া ছয়লাভ করে ফেলেছে।

তার জন্য দায়ী আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তারা সাংগঠনিকভাবে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।  আর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

আরও জানাগেছে, এসকল অভিযোগের বিষয়ে পরে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীদের আশ্রয়- প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। দলের বদনাম হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করা যাবে না। এটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ।

যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। 

সভার শুরুতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও বিএনপি'র চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং  বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সু- স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা হয়। 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.

সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ( ঢাকা বিভাগ) কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিশেষ অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) নজরুল ইসলাম আজাদ। 

এছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এড. সরকার হুমায়ূন কবির, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন আনু, ফহেত মোহাম্মদ রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এড. রফিক আহমেদ, ডা. মজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, এড. এইচএম আনোয়ার প্রধান, মাহবুব উল্লাহ তপন, বরকত উল্লাহ, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেনশাহ আহম্মেদ, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশিদ লিটন,মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ, মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এস এম আসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মির্জা কামাল উদ্দিন জনি, বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন, আবুল হোসেন রিপন, শেখ সেলিম, নাজমুল হক, চঞ্চল মাহমুদ, ইকবাল হোসেন, শাহাদুল্লাহ মুকুল, সাইফুল ইসলাম বাবু, হিরা সরদার, ইকবাল হোসেন, সোহেল খান বাবু, মহানগর মহিলাদলের সভানেত্রী দিলারা মাসুদ ময়না, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাদুল্লাহ মুকুল, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, গোগনগর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াজী, আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আঃ রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাঁরা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ, ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহেন শাহ্ মিঠু, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাজু আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাজাদা আলম রতন, মহানগর ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ মামুনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র ল ইসল ম ন ত কর ম র ব এনপ রহম ন গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

গুম করা হতো তিনটি ধাপে 

শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদের কীভাবে গুম করা হতো, সেটি গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কমিশন বলেছে, ‘তিন স্তরের পিরামিড’–এর মাধ্যমে গুমের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হতো।

এই পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছিলেন।

পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরে ছিলেন বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আর পিরামিডের তৃতীয় স্তরে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৪ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।

আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থায় গত সাড়ে ১৫ বছরে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যেখানে গুমের ঘটনায় নীরব সম্মতি থাকার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল বিষয়টি (গুমের মতো গুরুতর অপরাধেও নীরব থাকা)। গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি তখন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না।

■ গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে ১,৮৫০ অভিযোগ এসেছে।  ■ যাচাই-বাছাই হয়েছে ১,৩৫০টি। ■ এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।

গুমের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার মধ্যে নীরবতা কেন ছিল, তা খুঁজেছে কমিশন। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে তখন বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভেতরে বিষয়টি (গুম) অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। বরং সেগুলোকে হয়তো একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা বাহিনীর অভ্যন্তরে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ এবং ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষার’ প্রয়োজনে স্বাভাবিক ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এসব কাজকে বিচ্যুতি নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত দায়িত্ব হিসেবেই পালন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত একজন কর্মকর্তার নথিতে তৎকালীন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের (পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে অবসরে যান, এখন পলাতক) মূল্যায়ন ছিল, ওই কর্মকর্তা কর্মদক্ষতার দিক থেকে ‘খুবই সন্তোষজনক’ এবং তাঁর নেতৃত্বগুণ ‘উচ্চমানের’।

ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে বেনজীর আরও লিখেছিলেন, তিনি ‘ভদ্র’, ‘সৎ স্বভাবের’ এবং ‘অত্যন্ত দক্ষ’। ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে নথিতে কোনো নেতিবাচক তথ্য লেখা হয়নি। যদিও তিনি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

অবশ্য অন্য একজন কর্মকর্তার বিষয়ে নথিতে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অনেক অভিযোগ লেখা আছে। এমনকি সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা আছে, ওই কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক জিয়াউল আহসানের (পরে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসির মহাপরিচালক হন, এখন কারাগারে) কাছে ‘ফিশ থেরাপি’ (মাছ উপহার) পাঠাতেন। তবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই।

গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ (সত্য উন্মোচন) শীর্ষক প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।

কমিশনের প্রতিবেদনে একটি বন্দিশালায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করা একজনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। বন্দিশালায় প্রথম গিয়ে ওই প্রহরী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘বন্দীদের সাথে কখনো স্বাভাবিক আচরণ করা যাবে না, যেটা স্বাভাবিক মানুষের সাথে করা হয়। তাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত রাখতে হবে, সব অধিকার থেকে। যাতে সে কষ্ট অনুভব করতে পারে।’

ওই প্রহরী কমিশনকে বলেছেন, বন্দিশালার দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, দায়িত্ব পালন না করলে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি আছে।

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে গুম

গত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) সাবেক মহাপরিচালক এবং একজন সাবেক পরিচালক। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ছয় কর্মকর্তা যখন ডিজিএফআইয়ের উচ্চ পদে ছিলেন, তখন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও হাসিনুর রহমান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান গোপন বন্দিশালায় আটক ছিলেন।

মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তা গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি যখন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সিটিআইবি) পরিচালক ছিলেন, তখন আমান আযমীর গুমের বিষয়ে তিনি সাইফুল আলম ও আহমেদ তাবরেজ শামসকে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা কমিশনকে বলেছেন, আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। 

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা ডিজিএফআইয়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা গত নভেম্বর পর্যন্ত পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) ছিলেন। তাঁরা তখনো সেনা আইনের অধীন ছিলেন। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাঁদের সেনাবাহিনীর অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ত। এখন তাঁদের হদিস নেই।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে অন্যায় নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। কারণ, কর্মকর্তারা অন্যায় আদেশ মানতে বাধ্য নন। এই নীতির কথা সবাই জানতেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কর্তব্যে চরম অবহেলা ছিল। তাঁরা অধস্তনদের দিকনির্দেশনা বা মানসিক সহায়তার কোনো উদ্যোগ নেননি।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ন্যায়সংগত আদেশ পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কোনো অন্যায় আদেশ পালনে কেউ বাধ্য নন। গুম–খুনের আদেশ যাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন, তাঁদের বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে। এসব অন্যায় আদেশ বাস্তবায়ন করা তাঁদের দায়িত্ব নয়, সেটি তাঁরা অনুধাবন করতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ