ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে সয়াবিন তেলের কাঁচামাল। খালাসের পর এসব কাঁচামাল কারখানায় নেওয়া হচ্ছে। এত আমদানির রেকর্ড অতীতে কখনো হয়নি। আমদানি বৃদ্ধিতে বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও সংকট কাটছে না।

এদিকে বাজারে সংকটের সুযোগে খুচরায় নির্ধারিত দামের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ–দশ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দাম দিতে। আমদানি বেশি হওয়ার পরও বাজারে তেলের সংকটের জন্য আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতারা একে অপরকে দুষছেন।

বাজারে সয়াবিনের চলমান সংকটের মধ্যে সরকারের দেওয়া শুল্কছাড়ের সুবিধা ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে। শুল্কছাড়ের এই সুবিধা উঠে গেলে লিটারপ্রতি সয়াবিন আমদানি ও বাজারজাতে ১৪–১৫ টাকার মতো বাড়তি শুল্ক–কর দিতে হবে। তাতে সয়াবিন তেলের দামও আরেক দফা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কায় সয়াবিন মজুতপ্রবণতাও বাড়ছে।

১৭ দিনে আমদানি ১ লাখ ৩৬ হাজার টন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত ১৭ দিনে বন্দর থেকে এক লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস করেছে সাতটি শিল্প গ্রুপ। একই সময়ে খালাস হয়েছে দুই লাখ টন সয়াবিনবীজ, যা মাড়াই করে পাওয়া যাবে ৩৬ হাজার টন সয়াবিন তেল।

আমদানি করা অপরিশোধিত তেল কারখানায় নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধন শেষে তা বাজারজাত করা হয়। পরিশোধের পর কোম্পানিগুলো বাজারে সরবরাহও করছে। এরপরও বাজারে সংকট কাটছে না।

জানতে চাইলে সয়াবিন তেলের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি বাড়ছে এটা ঠিক। আমরাও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তেল বাজারে দিচ্ছি। এখন সংকট হওয়ার কথা নয়।’

এবার রোজার আগে জানুয়ারিতে ১ লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছিল। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে সেই ধারাবাহিকতা ছিল না। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও আমদানি বাড়তে থাকে। আমদানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

বাজারের চিত্র ভিন্ন

বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহের খোঁজে চট্টগ্রামের খুচরা বাজার চকবাজার ও বহদ্দারহাটে যান প্রথম আলোর প্রতিবেদক। এই দুই বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০টি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করা হয়। গত শনিবার এসব দোকানে এক বা দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের মজুত ছিল কম। অবশ্য দুই বাজার ঘুরে অধিকাংশ দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। তবে বোতলের গায়ে ৮৫০ টাকা দাম লেখা থাকলেও দোকানিরা বিক্রি করছেন ৯০০ টাকার বেশি দামে। আবার এক লিটারের বোতলের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮৫ টাকা।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে বাজারে সয়াবিনের সংকট ছিল। এ সংকট এখন কমে এলেও চাহিদা অনুযায়ী তেল নেই বাজারে। তাই বাজারে এখনো তেলের দাম বাড়তি। কারণ পরিবেশকেরা (ডিলার) পর্যাপ্ত তেল বাজারে ছাড়ছেন না। চকবাজারে নাজমুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে, ব্যবসায়ীরা মানে না। দিন শেষে ভোগান্তি হয় মানুষের। দুই দিন আগেও ১৯০ টাকায় এক লিটার তেল কিনেছি। বোতলের গায়ে লেখা দাম মুছে দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

নাজমুলের বক্তব্য যাচাই করতে চকবাজারের কয়েকটি মুদিদোকানে খোঁজ নিয়ে একটি দোকানে এমন বোতল পাওয়া গেল। তবে ছবি তুলতে চাইলে ওই বিক্রেতা তা দেননি। মাসুম নামের ওই বিক্রেতা বলেন, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ১৭৫ টাকার বেশি দামে। তাই ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ক্রেতারা যাতে ঝামেলা না করে, তাই দাম মুছে দিয়েছে পরিবেশক।

যদিও পরিবেশকেরা বলছেন, তাঁরা এ কাজ করেন না। একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি নিউটন মল্লিক বলেন, তাঁরা আগের তুলনায় বেশি তেল সরবরাহ করছে। এরপরও দোকানিরা কেন তেল নেই বলছেন, তা জানা নেই।

বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো.

সাইফুল ইসলাম বলেন, আমদানি-রপ্তানির হিসাব খবরে দেখি। সাধারণ মানুষ তো আমদানি-রপ্তানি বোঝে না। মানুষ বোঝে বাজারে গিয়ে স্বাভাবিক দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে কি না। যেহেতু আমদানি হয়েছে বলে শুনেছি, তাহলে এত সয়াবিন তো দেশেই আছে। তাহলে দাম বেশি কেন?

শুল্কছাড়ের মেয়াদ শেষ, মজুতের প্রবণতা?

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত বছরের শেষ দিকে তিন দফায় সয়াবিন তেলের শুল্ক–কর কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে শুল্ক–কর ১৭-১৮ টাকা থেকে কমে ৭ টাকায় নেমে এসেছে। যেমন মার্চে খালাস হওয়া সয়াবিন তেলে শুল্ক–কর ছিল কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা। এই সুবিধা রয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এরপর স্বাভাবিক শুল্ক–কর কার্যকর হবে।

৩১ মার্চের পর শুল্কছাড় সুবিধা বাড়ানোর আবেদন করেছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। এ সময় বাড়ানো না হলে প্রতি লিটার সয়াবিন আমদানি ও বাজারজাতে ১৪ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি শুল্ক–কর দিতে হবে বলে আবেদনে বলা হয়। তাতে সয়াবিনের দাম আরও বাড়তে পারে। শুল্কছাড়ের বিষয়টি সামনে রেখে সয়াবিন মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যেমন গত সপ্তাহে নগরের খতিবের হাট এলাকায় এক দোকান থেকে ৬ হাজার ৭০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে আমরা সয়াবিনের মজুত পেয়েছি। বিশেষ করে ডিলারদের কাছে সয়াবিনের মজুত পাওয়া গেছে। অভিযানের কারণে বাজারে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি বিক্রি হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক কর প রবণত সরবর হ পর শ ধ প রথম আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না

চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।

বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।

জ্বালানি তেল

বিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।

কৃষিপণ্য

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।

খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।

২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।

দেশে কেন দাম বেশি

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।

আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।

দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
  • তিন কারণে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, অক্টোবরের বৃষ্টিও ভোগাবে
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • সবজির দাম কমতির দিকে, আটার দাম কেজিতে বাড়ল ৫ টাকা