দারিদ্র্যপ্রবণ বিভাগ বরিশালে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেশি, সচেতনতা কম
Published: 18th, March 2025 GMT
দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ বিভাগের তকমা আগেই জুটেছিল বরিশালের। এবার নারীর প্রতি সহিংসতায়ও অগ্রভাগে উঠে এসেছে উপকূলীয় বিভাগটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দারিদ্র্যের সঙ্গে নারী নির্যাতনের সরাসরি সম্পর্ক আছে। অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা ও অসচেতনতার কারণে নারীরা সহিংসতার শিকার হলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নারী-পুরুষ সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে প্রকাশিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ-২০২৪’ অনুযায়ী, সারা দেশে গড়ে ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে এ হার ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। খুলনায়ও এ হার ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। সবচেয়ে কম নির্যাতনের শিকার হন সিলেটের নারীরা, ৭২ দশমিক ১ শতাংশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
এর আগে বিবিএসের খানার আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২-এ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস বরিশাল বিভাগে—এমন তথ্য উঠে এসেছিল। যেখানে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বরিশালের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিডিএর সভাপতি আনোয়ার জাহিদ বলেন, বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের পেছনে একাধিক কারণ আছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, নদীভাঙন, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, কৃষি উৎপাদনে পিছিয়ে থাকা, শিল্পকারখানার অভাব ও সঠিক কর্মসংস্থান না থাকা অন্যতম।
নারী নির্যাতনের নেপথ্যে দারিদ্র্যবিবিএস ও ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী নির্যাতনের প্রকৃতি বহুমুখী—শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও যৌন নির্যাতন। দারিদ্র্যের সঙ্গে নারী নির্যাতনের সরাসরি সম্পর্ক আছে। অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও নির্ভরশীলতার কারণে নারীরা সহিংসতার শিকার হলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। পাশাপাশি সামাজিক রীতিনীতি, কুসংস্কার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়াও নির্যাতন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে টিআইবির আয়োজনে নারী-পুরুষের সম্মিলত প্রতিবাদ। রোববার দুপুরে বরিশাল নগরের সদর রোডে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যানবাহনের চাপ
ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতি পথে যমুনা সেতু-সংলগ্ন মহাসড়কে তীব্র যানজট। তাই অনেকে পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। কাজীরহাট-আরিচা ফেরিঘাটে ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। আগের ৪টি ফেরির সঙ্গে আরও ২টি যুক্ত হওয়ায় এই নৌপথে মোট ৬টি ফেরি চলাচল করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও বাস কাউন্টারগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে যানজট শুরু হয়। শুক্র ও গতকাল শনিবার যানজট তীব্রতর হয়। এর মধ্যে শনিবারের যানজটে পাবনা-ঢাকা পথে যাতায়াতকারী অনেক বাস আটকে পড়ে। এতে পাবনা, বেড়াসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঢাকাগামী বাসের সংকট দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাগামী বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়িগুলো যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের ফেরি পারাপার বেছে নেয়। এতে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত কাজীরহাট ফেরিঘাটে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহনের চাপ আছে।
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আগে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ৪টি ফেরি চলাচল করত। ঈদ উপলক্ষে এখন আরও ২টি ফেরি বাড়িয়ে মোট ৬টি ফেরি করা হয়েছে। এগুলো হলো ২টি রো রো ফেরি শাহ আলী ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং ৪টি সেমি রো রো ফেরি বাইগার, গৌরী, চিত্রা ও ধানসিঁড়ি। এই ৬টি ফেরি দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহনের চাপ সামলানো যাচ্ছে। বাসসহ যানবাহনগুলোকে ফেরিঘাটে বেশি দেরি করতে হচ্ছে না।’
কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকামুখী আলহামরা পরিবহনের যাত্রী আবু হানিফ বলেন, ফেরিতে ওঠানামা মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। আর আরিচা থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেমন যানজট ছিল না। খুব ভালোভাবে ঢাকা পৌঁছাতে পেরেছেন। অথচ আরও দুই ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েও তাঁর পরিচিত একটি পরিবারকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে ৫-৬ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল শনিবার। আমাদের বেশ বেগ পোহাতে হলেও যানবাহনগুলো ভালোভাবে পার করে দিয়েছি। শনিবার আমাদের এই ঘাট হয়ে ফেরিতে ১০১টি বাস, ৪০১টি ছোট গাড়ি ও ৮০টি ট্রাক পার হয়েছে। আর আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫টি বাস, ১৬টি ট্রাক, ৪২টি ছোট গাড়ি ও ২০০টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে।’
বেড়া ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী আলহামরা পরিবহনের বেড়া শাখার ব্যবস্থাপক বরকত আলী বলেন, ‘যমুনা সেতুর যানজটে আমাদের কয়েকটি বাস এখনো আটকে আছে। এতে নির্ধারিত সময়ে শুধু আমাদের বাসই নয়, অন্য কোম্পানির বাসগুলোও ঢাকার উদ্দেশে ছাড়তে পারছে না। আর কোনো বাস ঢাকা থেকে বেড়া এসে পৌঁছানোর পর সেই বাস এখন থেকে আমরা কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। বতর্মান অবস্থায় এই পথে যাতায়াতে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।’