কাশীপুরে উজির আলী স্কুলের প্রাক্তনদের ইফতার মাহফিল
Published: 21st, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের শতবর্ষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওভোগ হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ আয়োজনে বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকরা অংশ নেন।
দেওভোগ হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার পারভেজ এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিফ আল তাওহীদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলেয়া বেগম।
আয়োজক প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানান, ৬ শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন খুটিনাটি স্মৃতিচারণ করেন। এ আয়োজনে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রয়াত হাজী উজির আলীর উত্তরসুরীরাও।
ইফতার মাহফিলের অনাড়ম্বর এ আয়োজনের প্রশংসা করে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, “এই আয়োজনটা হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের আয়োজন। সিনিয়র-জুনিয়র মিলে এই ইফতার উপলক্ষে দেখা হয়, সাক্ষাৎ হয়।
অনেকে অনেক ব্যস্ততার কারণে দেখা হয় না সাক্ষাৎ হয় না। কিন্তু এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক স্মৃতিচারণ হয়। আপনাদের এই বিশাল আয়োজন দেখে আমরা অনেক মুগ্ধ। এ অনুষ্ঠান করতে আয়োজক কমিটিরা মনে হয় অনেক কষ্ট করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি সরকারি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় উপস্থিত হতে পারেননি বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার পারভেজ।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের জেলা প্রশাসক স্যার নারায়ণগঞ্জ নিয়ে অনেক চিন্তিত। এ নারায়ণগঞ্জকে গ্রিন নারায়ণগঞ্জ তৈরি করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি। এতে নারায়ণগঞ্জবাসীর সহযোগিতা আমরা চাই।”
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিফ আল তাওহীদ বলেন, “আগে বুঝতে পারিনি এত বিশাল ও সুন্দর একটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আপনাদের উপস্থিতি দেখে বুঝতে পারছি এই বিদ্যালয়টি অনেক পুরোনো। ফতুল্লা থানায় এই স্কুলটি যুগ যুগ ধরে আলো ছড়িয়ে আসছে, এই আয়োজন তার প্রমাণ। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই আয়োজনটি করেছে এবং আমাদেরকে এখানে দাওয়াত করায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।”
ইফতার মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ধর্মীয় শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন। সন্ধ্যায় ইফতারের পর এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অন ষ ঠ ন উপস থ ত সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।