কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে গতকাল শনিবার এক কন্যাশিশু ও তিন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্যসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। ২৫ জনকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ছিলেন বলে জানিয়েছেন জীবিতরা।

নিখোঁজ মো.

বিল্লাল (৩০) শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির সিপাহি। তাঁর সঙ্গে একটি রাইফেল ও চারটি ম্যাগাজিন ছিল। মৃত ও নিখোঁজ রোহিঙ্গাদের নাম জানা যায়নি।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা শুক্রবার রাত আড়াইটায় ডুবে যায়। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত চার রোহিঙ্গার ভাসমান লাশ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিজিবির সদস্যসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।’

স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়ায় সাগরে ভাসতে দেখা যায়। বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় মাছ ধরার নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন। ওই নৌকায় উঠেন বিজিবি সদস্য। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেন স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে তাদের মিয়ানমার থেকে আনছিল।

ডুবে যাওয়া নৌকার মালিক মো. আমিন বলেন, ‘মাঝরাতে সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ধরতে যাওয়ার কথা বলে ওই বিজিবি সদস্য আমার নৌকাটি নিয়ে যান। পরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি কূলে নিয়ে আসার পথে ঢেউয়ের স্রোতে সাগরে ডুবে যায়।’

শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে বিজিবি সদস্যদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। ভোরে ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ।’

শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, ‘স্থানীয় কিছু দালাল মিলে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের পারাপার করছে।’

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নৌকার তলা ফেটে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নৌকাটি উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সমুদ্রে ভাসমান মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে। উদ্ধার অভিযান চলছে। উদ্ধার রোহিঙ্গারা বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প ন বল ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ