দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিকস। আগের তিন সপ্তাহেও এটির শেয়ারদর বেড়েছে। গত এক মাসে সিরামিক খাতের এই লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাজারে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১১ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর টানা মূল্যবৃদ্ধিতে গত বৃহস্পতিবার এটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ টাকা ২০ পয়সায়। সেই হিসাবে এক মাসে এটির দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ১২১ শতাংশ।

শেয়ারবাজারে হুহু করে শেয়ারের দাম বাড়লেও কোম্পানিটি কিন্তু লোকসানি। সর্বশেষ গত জুলাই–ডিসেম্বরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি ২১ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। তাতে এটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৫ পয়সা ঋণাত্মক। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত এক মাস ধরে বেড়েই চলেছে। যদিও মূল্যবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানেন না বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা মনে করেন, গুজব ছড়িয়ে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটির দাম বাড়ানো হচ্ছে।

গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করা হয়েছিল উপদেষ্টা কমিটি। ওই কমিটি শাইনপুকুর সিরামিকসসহ বেক্সিমকোর বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ায় সরকার শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে যায়। এর বদলে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তা দিয়ে বেক্সিমকোর বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়।

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল শাইনপুকুর সিরাকিমস। সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি টাকা। বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির দখলে। শুধু লেনদেন নয়, গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫ টাকা ২০ পয়সা বা ২৬ শতাংশের বেশি।

হঠাৎ এক মাস ধরে শেয়ারবাজারে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের এমন দাপুটে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারগুলো নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে কর্তৃপক্ষ নানা কারণে এগুলোর আয় ও মুনাফাকে নানাভাবে কমিয়ে দেখাত। এ ছাড়া বেক্সিমকোর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকানা বদল নিয়েও নানা জল্পনাকল্পনা রয়েছে। এসব প্রচারণাকে কাজে লাগিয়ে কারসাজিকারকদের একটি অংশ এই শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটাচ্ছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজারে বেক্সিমকোর মালিকানাধীন কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। এর আগে ৯ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৮ টাকা। টানা দরপতনে গত ২৭ অক্টোবর সেই দাম নেমে আসে ১০ টাকায়। অর্থাৎ আড়াই মাসে এটির শেয়ারের দাম প্রায় চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। সেখান থেকে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এটির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে।

২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিকস। সর্বশেষ গত বছরের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর শেয়ারের ৫০ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। এটি শেয়ারবাজারে মাঝারি মানের ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ল নদ ন র এক ম স

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ