পেঁয়াজ রপ্তানি থেকে শুল্ক তুলে নিল ভারত, কী লাভ বাংলাদেশের
Published: 23rd, March 2025 GMT
পেঁয়াজ রপ্তানি থেকে শুল্ক তুলে নিয়েছে ভারতের রাজস্ব বিভাগ। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক তুলে নিচ্ছে দেশটি। এত দিন পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ছিল। অর্থাৎ এখন থেকে ভারতের রপ্তানিকারকেরা বিনা শুল্কে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন।
গতকাল শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমেও এ খবর বেরিয়েছে।
প্রায় দেড় বছর ধরে ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়াসহ পেঁয়াজ রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল ভারত সরকার। এবার সেখান থেকে বেরিয়ে এল তারা। মূলত পেঁয়াজের মজুত বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
এমন একসময় ভারত এই রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করল, যখন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কম। অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে, তখন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে দাম আরও কমে যায়। তাতে কৃষকেরা মার খান। আবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি দাম কমে গেছে, এমন ঘটনাও দেখা গেছে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদনের পরিমাণের নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কোনো কোনো বছর চাহিদার চেয়েও পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলেও পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
অভিযোগ আছে, দেশে প্রতিবছর কী পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন, তার কত অংশ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব এবং কত অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। মজুতদারেরা তার সুযোগ নেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে এই সময় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যেতে পারেই বলে শঙ্কা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা যায়, আজ রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৪ সালের এই দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
দেশে পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। খেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলা হয়েছে। ফলে দেশের বাজারে এখন পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজের মজুত আছে। আমদানি করা পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। সে কারণে টিসিবির দৈনন্দিন হিসাবের খাতায় আজকের দিনে আমদানি করা পেঁয়াজের দামের ঘরশূন্য। তবে এক মাস আগে অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। তখন দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
ভারতে কবে থেকে এই শুল্ক ছিল২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ধরে রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ওই সময় অভ্যন্তরীণ ঘাটতির আশঙ্কায় পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ভারত। ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সে সুবিধা নিতে পারছিলেন না দেশটির কৃষকেরা। এ নিয়ে তখন আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। আন্দোলনের মুখে ও লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের ৪ মে আবার পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
সেই সঙ্গে ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক এবং প্রতি টনের ন্যূনতম মূল্য ৫৫০ ডলার ঠিক করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রত্যাহারের পাশাপাশি রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এবার সেই ২০ শতাংশ শুল্কও প্রত্যাহার করা হলো।
এর আগেও ভারত সময়-সময় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখতে বিদেশে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বও হয়েছে। ফলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের সেই নিষেধাজ্ঞার পর ভারত বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা।
এ ছাড়া বছরের প্রথম ছয় মাসেও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা, অর্থাৎ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মূলত ব্যাংকের বিনিয়োগ ও সুদ আয় বৃদ্ধির কারণে ইপিএস বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক ঘোষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি-জুন সময়ে শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ২৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৩০ টাকা ৯৯ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আমানত সংগ্রহ ও ব্যাংকঋণ বৃদ্ধির কারণে নগদ প্রবাহ বেড়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদের মূল্য (এনএভি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৬০ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যা ছিল ৩৯ টাকা ৩৮ পয়সা। নিট মুনাফা ও সরকারি সিকিউরিটিজের পুনর্মূল্যায়নের ফলে এ বৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ১২ দশমিক ৫ শতাংশ স্টক। ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ফলে তাদের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা (এনপিএটি) হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ৮২৮ কোটি টাকা। একক ভিত্তিতে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ।