ভারতের বিপক্ষে রক্ষণে জুটি বাঁধবেন হামজা-তপু
Published: 24th, March 2025 GMT
শিলংয়ের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে ভেন্যু নিয়ে বৈরিতার মধ্যে রোববার বিকেলে অনুশীলনে অন্যরকম এক বাংলাদেশের দেখা মেলে। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের আর্টিফিশিয়াল টার্ফে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে মধ্যমণি হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ব্রিটিশ প্রবাসী এ ফুটবলার অল্প কয়েক দিনেই সবাইকে আপন করে নিয়েছেন। জামাল ভূঁইয়া, তারিক রায়হান কাজীও তাঁকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। মাঠের বাইরের বন্ধনকে সবুজ গালিচায় মেলবন্ধনে রূপ দেওয়ার প্রত্যয় তপু বর্মণের। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে রক্ষণভাগে হামজার সঙ্গে তপু বর্মণের জুটি দেখার অপেক্ষায় সবাই।
লেস্টার সিটির জার্সিতে হামজার ভূমিকা ছিল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। শেফিল্ড ইউনাইটেডেও তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখা গেছে। ভারতের বিপক্ষে লাল-সবুজের জার্সিতে ঠিক কোন ভূমিকায় খেলবেন, তা এখনও নিশ্চিত করেননি কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা।
দলের সূত্র থেকে যতটুকু জানা গেছে, ভারতের বিপক্ষে যাতে গোল হজম না করে সে জন্য হামজাকে ডিফেন্সিড মিডফিল্ডার হিসেবেই দেখা যেতে পারে। রক্ষণ যাতে মজবুত থাকে, সে জন্য হামজার পেছনে তপু বর্মণকে খেলাতে পারেন বাংলাদেশ কোচ। আবার বাংলাদেশ যদি আগে গোল দিয়ে দেয়, তাহলে তপু বর্মণ ও হামজা একই সারিতে রক্ষণের ভূমিকায় দাঁড়াতে পারেন। রোববার বাংলাদেশের অনুশীলনেও সে রকম ইঙ্গিত দেখা গেছে।
হামজার সঙ্গে মাঠে জুটি বাঁধা নিয়ে রোমাঞ্চিত তপু, ‘সব কিছু মিলিয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের খুব ভালো বন্ডিং হয়েছে, যেটা খুব জরুরি। এটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, দিন শেষে আমরা ভালো রেজাল্ট করতে পারব।’
ফুটবলের বাইরে অন্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান বসুন্ধরা কিংসের এ ডিফেন্ডার, ‘হামজা আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে ভালোভাবে মিশেছেন। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তাঁর। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কীভাবে আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমি সব সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলি। সব সময় ফুটবল নিয়ে কথা হয় না, পরিবার নিয়েও কথা হয়। তিনি ইংল্যান্ডে কীভাবে থাকেন, খাওয়া-দাওয়া নিয়েও আলাপ হয়।’
স্বল্প সময়ে হামজার সঙ্গে বন্ধুত্ব হলেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠের রসায়ন কেমন হয় তপুর, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই। তবে তপুর ভয়টা ভারতের সেটপিস নিয়ে। ১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে ভারতের করা গোলগুলোর ভিডিও দেখা জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এ ডিফেন্ডারের মনে হয়েছে, ভারত সেটপিসে বিপজ্জনক। ‘সেটপিস নিয়ে কাজ হয়েছে অনেক দিন। শেষ ম্যাচে ভারত গোল করেছে সেটপিসে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে যেন সেটপিসে গোল হজম না করি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।