কুমিল্লার মুরাদনগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগে আবুল কালাম নামের শ্রমিক দলের এক নেতাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় থানায় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপরেও হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

গতকাল সোমবার রাতে মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম মাসুদ রানা। তিনি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে থানায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। আর অভিযুক্ত আবুল কালাম উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আটক হওয়ার আগে চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন।

পুলিশ জানায়, থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় গতকাল রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অন্যদিকে চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের ঘটনায় উপজেলার আকবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন। হেফাজতে থাকা আবুল কালামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আবুল কালাম ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন হলেন উপজেলার রহিমপুর গ্রামের মো.

হোসেন, নবীপুর গ্রামের ওহাব আলী, মুরাদনগর উত্তরপাড়া গ্রামের আবুল হাসান, পরমতলা গ্রামের মহসিন সরকার ও রহিমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন। যুবদল নেতা মাসুদ রানা জানান, আবুল কালাম শ্রমিক দল নেতা। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, একজন চাঁদাবাজকে আটকের জেরে তাঁরা থানায় হামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, গতকাল ইফতারের আগে তিনিসহ তিনজন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিপি (চাঁদা) দিতে হবে।’ তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কি না জিজ্ঞেস করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাঁকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তাঁরা হামলা করেন। চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাঁদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর হামলার ঘটনায় অভিযোগ করতে তাঁরা থানায় যান।

উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫ থেকে ২০ জন থানার সামনে এসে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। এর মধ্যে যুবদল নেতা মাসুদের নেতৃত্বে ৭০–৮০ জন দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা করেন। আমরা তিন-চারজন থানা ভবনের গেটের ভেতরে ছিলাম, বাকিরা ছিলেন বাইরে। তাঁরা প্রথমে আমাদের বাইরে থাকা অন্তত ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় পুলিশ গেট বন্ধ করে দিলে তাঁরা গেট ভেঙে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা।’

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ঘটনার সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ৩০ মিনিট দফায় দফায় থানায় গেট ভাঙার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা থানার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তাঁরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পরে কয়েক দফা চেষ্টা করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তবে থানায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনার নেপথ্যে উপদেষ্টা আসিফের চাচাতো ভাই উবায়দুল সিদ্দিকী। আবুল কালামের স্ট্যান্ডের একটি সিএনজির (অটোরিকশা) সঙ্গে উবায়দুলকে বহনকারী সিএনজির ঘষা লাগে। এ সময় উবায়দুল নেমে অটোরিকশার চালককে থাপ্পড় দেন। তখন গন্ডগোল বাধলে আবুল কালাম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা একটু দূরে গিয়ে পুলিশের খবর দিয়ে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করায়। পরে আমাদের কিছু লোক থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে জানতে চায়, কেন অন্যায়ভাবে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করছে। এ সময় ওসি রুমের ভেতরে আমাদের লোকদের জিম্মি করে উবায়দুলসহ পেটাতে থাকেন। পরে ফেসবুকে লাইভে মানুষ ঘটনাটি জানতে পেরে থানায় যান তাঁদের ছাড়িয়ে আনার জন্য। মূল ঘটনা হলো এটা। তাঁরা এখন মিথ্যাচার করছে আমাদের বিরুদ্ধে। উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর য বদল ন ত ম র দনগর উপজ ল র দল ন ত আম দ র কর ছ ন ঘটন য় র ওপর ঘটন র এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

কুমিল্লার মুরাদনগর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আসিফ মাহমুদের পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্য রয়েছেন। 

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে উপজেলা সদরের আল্লাহ চত্বরে ঘটনাটি ঘটে। 

এলাকাবাসী জানান, বুধবার বিকেলে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সদরের আল্লাহ চত্বরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হন।  সমাবেশ লক্ষ্য করে পার্শ্ববর্তী জেলা পরিষদের মার্কেট থেকে কয়েকটি ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক আহত হন, তাদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবে বিএনপির অভিযোগ বক্স, যা পাওয়া গেল

সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান

মিছিল নিয়ে আসা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিনাজুল হক বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মিছিল নিয়ে আসার পর শত শত ইটপাটকেল ছুড়ে আমাদের ধাওয়া দিতে থাকে। আমাদের অনেক সমর্থক আহত হন।”

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপির মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, “তারা হামলা করার পর আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ করেছে।”

কুমিল্লার মুরাদনগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আমিন কাদের খান জানান, আজ মুরাদনগর সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলছিল। এ সময় পাশে অবস্থান করা কিছু লোক বিনা উসকানিতে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপরে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করে। 

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি
  • উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫
  • বন্দরে ডেভিল হান্ট অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা আয়াত গ্রেপ্তার  
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
  • কুমিল্লায় ট্রিপল মার্ডার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার