নগরবাসীর মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে আনন্দ পূর্ণ ও বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ উৎসবের আয়োজন করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ) ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাত শেষে জামাতের স্থান পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হবে। আনন্দ মিছিলটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে আগারগাঁও প্রধান সড়ক হয়ে খামার বাড়ি মোড় পার হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে (সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা) গিয়ে শেষ হবে।
ঈদ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ঈদ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ঈদ উপলক্ষ্যে সেমাই ও মিষ্টির ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। এছাড়াও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলার আয়োজন করা হবে। মেলা ঈদের দিন এবং ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। দুই দিনব্যাপী আয়োজিত ঈদ মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ডিএনসিসি কর্তৃক ঈদের জামাত, ঈদ আনন্দ মিছিল ও ঈদ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো.
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই বছর প্রথম ঈদ আনন্দ উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাত শেষে মাঠ থেকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হবে। বর্ণাঢ্য এই আনন্দ মিছিলে ঘোড়ার গাড়ি, ঢোল, বাজনাসহ নানা আয়োজন থাকবে। পাশাপাশি এই আনন্দ মিছিলে ফেস্টুন প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে ন্যায্য ঢাকা শহর গড়ার বার্তা দেওয়া হবে।
আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ঈদের জামাত আয়োজনের জন্য প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়েছে। দশ হাজার মানুষের অংশগ্রহণের জন্য প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হচ্ছে। মহিলাদের জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওযু করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তত আছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে এবং ৯টায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
প্রস্তুতি সভা ও ভেন্যু পরিদর্শনে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এম এ আখের, সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মশালায়ের যুগ্মসচিব মো. মিজানুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের এডিসি তানিয়া সুলতানা প্রমুখ।
ঢাকা/আসাদ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ আনন দ ম ছ ল ঈদ র জ ম ত কর মকর ত অন ষ ঠ ত প রস ত ত ড এনস স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।