গণহত্যার অস্বীকার ঠেকাতে আগে বিচার দরকার
Published: 26th, March 2025 GMT
ব্যক্তির স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বোধও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবি দানা বাঁধতে বাঁধতে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান অস্বীকারের প্রবণতা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উঠে এসেছে এ কথাগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘গণহত্যা, অস্বীকারের প্রবণতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ।
সহুল আহমদ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, গণহত্যাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে। গণহত্যা বা এ ধরনের অপরাধের ঘটনার সত্যতার অস্বীকার ঠেকাতে সবার আগে দরকার বিচার।
এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম ও লেখক সারোয়ার তুষার। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাতের পঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—গণহত্যার পক্ষগুলো সব সময় জাতিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে, মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ১৯৭১–এর পূর্বকালে এ অঞ্চলের মানুষ সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক আলোচনা, মীমাংসা ইত্যাদি চালিয়েছে। তবে একাত্তরের ২৫ মার্চ সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নে সুদীর্ঘকাল লড়াই–সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, স্বপ্নভঙ্গের শিকারও হয়েছে। যে বিপুল জনগোষ্ঠী একাত্তরে গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না, সেটাই আজকের দিনের বড় প্রশ্ন।’
অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণহত য র স ব ধ নত এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।