উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ওয়াল্ট রোস্টো তাঁর স্টেজেস অব ইকোনমিক গ্রোথ তত্ত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাঁচটি ধাপ রয়েছে বলে মনে করেন। পাঁচটি ধাপে সমাজ ও দেশ পৌঁছাতে পারলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।

প্রথাগত সমাজব্যবস্থা এই ধাপের প্রথম স্তর, এরপর রয়েছে প্রস্তুতিমূলক পর্যায়, তারপরে উন্নয়নের জন্য উড্ডয়ন বা টেক-অফ পর্ব, এরপরের দুই ধাপ পরিপক্বতা ও ম্যাস কনজামশন বা ভোগের মেয়াদকাল।

বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা এই মডেল অনুসারে উড্ডয়ন বা টেক-অফের পথে রয়েছে বলে মনে করা যায়। নানাভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এখনো অর্জিত হয়নি। রোস্টোর তত্ত্ব অনুসারে, এই পর্যায়ে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ।

এ বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সব অংশীজনকে তাদের অধীন চলমান সব প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধ বা স্থগিতের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষত টেকসই উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা শুধু অভ্যন্তরীণ রাজস্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা কঠিন। বাংলাদেশের জন্য এই তহবিল হ্রাস নারীশিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুপুষ্টি ও গণতন্ত্রের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।

তহবিলের পরিধি কেমন ছিল

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডির তহবিল বরাদ্দের প্রবণতা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। ২০২৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৭১ মিলিয়ন ডলার তহবিল নিয়ে শীর্ষস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে এই বরাদ্দ ছিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ছিল ৫৭০ মিলিয়ন ডলার। ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স ডট গভ সাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে সামগ্রিক সংকটের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

দুই দশকের তুলনামূলক চিত্র

২০২৫ সালের ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের দাতাদের মধ্যে জাপান (২.

২৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ (১.১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যুক্তরাষ্ট্র (৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ফ্রান্স (২১৪.৫ মিলিয়ন) ও জার্মানি (১৯২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

২০০১ সালে ইউএসএআইডি বাংলাদেশকে ১২০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছিল, যা তখনকার সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১৫ সালে তহবিলের আকার ছিল ২১০ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে বরাদ্দ ৩২০ মিলিয়ন ডলারে নামলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক তহবিলের আকার কমার আশঙ্কা করেন অর্থনীতিবিদেরা। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল ৭১ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে দেখা যায়।

খাতভিত্তিক বরাদ্দের পরিবর্তন

২০০১ সালে ইউএসএআইডির সহায়তার মূল লক্ষ্য ছিল খাদ্যনিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য খাত। ২০২৪ সালের বরাদ্দের ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে ৫৯ মিলিয়ন, কৃষিতে ৪১ মিলিয়ন, গভর্ন্যান্সে ২৯ মিলিয়ন, শিক্ষায় ৩৩ মিলিয়ন এবং মানবিক সহায়তায় ২৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে ২০২৫ সালে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ আরও কম দেখা যায়।

*[এখানে একটি গ্রাফ বসবে]

২০২৪ ও ২০২৫ সালের চিত্র

ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স ডট গভ সাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের জন্য ৮.১৯৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল দ্য ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন কর্মসূচিতে, ৭.১৮ মিলিয়ন বরাদ্দ ছিল আরবান হেলথ কর্মসূচিতে, ৬.০৪৪ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল আমার ভোট আমার কর্মসূচিতে, ৪.৫ মিলিয়ন ডলার ছিল ইউএসএআইডি ইকোসিস্টেম প্রতিবেশ কর্মসূচিতে, ৩.৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল আইন সহায়তা কর্মসূচিতে, ৩.২৩ মিলিয়ন ডলার ছিল বাংলাদেশ অ্যাডভান্সিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ থ্রো এনার্জি (ব্যাজ) কর্মসূচিতে, ৩ মিলিয়ন ছিল পশুসম্পদ ও পুষ্টি কর্মসূচিতে, ২.৮৩৪ মিলিয়ন ডলার ছিল সিভিল সোসাইটির সাংগঠনিক ক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে, ২.৮ মিলিয়ন ডলার ছিল ডেমোক্রেটিক লেবার অ্যান্ড ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে।

২০২৪ সালে যেসব কার্যক্রমে ফান্ডিং করা হয়, তার মধ্যে দেখা যায় মানবিক সহায়তার জন্য ছিল ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ৭৮.০১ মিলিয়ন ডলার ছিল দ্বিতীয় ইমার্জেন্সি কমোডিটি ক্রেডিট করপোরেশন ফান্ডে, ৪৩ মিলিয়ন ডলার ছিল সুরক্ষা, সহায়তা ও সমাধান কার্যক্রমে, ১৯.৭৪ মিলিয়ন ডলার ছিল বাংলাদেশ টিবি হেলথ প্রকল্পে, ১৪.৬৭ মিলিয়ন ডলার ছিল বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী কর্মসূচিতে, ১৩.২ মিলিয়ন ডলার ছিল ইউএসএআইডি হোস্ট ও প্রভাবিত কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকটিভিটি ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন ভেঞ্চার (ডিআইভি) কার্যক্রমে, ১৩.১৭ মিলিয়ন ডলার ছিল এসো শিখি কর্মসূচিতে, ৯.৪৯২ ছিল ভিত্তি কর্মসূচিতে, ৮.৩৮ মিলিয়ন ছিল কনসালটেটিভ গ্রুপ অন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ (সিজিআইএআর) ফান্ডের দ্বিতীয় ফলোঅন গ্র্যান্ট টু ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কার্যক্রমে।

২০২০ সালে যেসব কার্যক্রমে ফান্ডিং করা হয়, তার মধ্যে দেখা যায় বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অ্যাডভান্সিং হেলথ কাভারেজে ২০.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, স্ট্রেনদেনিং পাবলিক সেক্টর সিস্টেমস ফর ম্যাটারনাল অ্যান্ড নিউবর্ন হেলথ কর্মসূচি (এসপিএসসিএমএনএইচপি), ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ (সিজিআইএআর) কার্যক্রমে ১০.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্সে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ টিবি হেলথ প্রজেক্টে ৫.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, রাইস অ্যান্ড ডাইভার্সিফাইড ক্রপসে ৫.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সংকটের বহুমাত্রিকতা

আমরা দেখছি ইউএসএআইডির সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ করে ফেলার কারণে দেশের উন্নয়ন খাতসংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থানের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। একদিকে বাংলাদেশে কমোডিটি অ্যাসিস্ট্যান্স, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা, কৃষি, গভর্ন্যান্স, শিক্ষা, মানবিক খাতে বিশাল বরাদ্দ বন্ধের কারণে সরাসরি সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠীর ওপরে চাপ তৈরি হবে। ২০২৪ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ইমপ্লিমেন্টিং পার্টনার হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ইউএসএআইডির কাছ থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ১৬৫ মিলিয়ন ডলার, জাতিসংঘের কাজে ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আইসিডিডিআরবি ১৯.৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, চেমোনিক্স ইন্টারন্যাশনাল ইঙ্ক ১২.৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল ১৯.৩৩ মিলিয়ন, ব্র্যাক ১৮.০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আরটিআই ইন্টারন্যাশনাল ১৬.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফান্ড গ্রহণ করে। ২০২৪ সালে নেওয়া এসো শিখি কর্মসূচির ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৮ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এই কর্মসূচির ইমপ্লিমেন্টিং পার্টনার উইনরক ইন্টারন্যাশনাল। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সাক্ষরতা উন্নয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া।

স্থানীয় সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করার পাশাপাশি মানসম্পন্ন শিক্ষার আওতা বাড়ানোর জন্য সরকারি সক্ষমতা বিকাশ ছিল লক্ষ্য। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বিভিন্ন স্কুলকে প্রস্তুত করতে সহায়তা করার কার্যক্রম যুক্ত ছিল এই কর্মসূচিতে। ২০২৪ সালের আরেকটি বড় কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশ টিবি হেলথ প্রজেক্ট। ইমপ্লিমেন্টিং পার্টনার ছিল আইসিডিডিআরবি। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালের ৪ মার্চ।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা উন্নতি করা। যক্ষ্মা প্রতিরোধ, কেস শনাক্তকরণ, রোগনির্ণয়, দ্রুত চিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসার জন্য ফলাফল, শক্তিশালী রেফারেল সিস্টেম উন্নত করা। প্রাইভেট সেক্টরকে যক্ষ্মা চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি এই কর্মসূচি।

২০২৪ অর্থবছরে নেওয়া আরেকটি কর্মসূচি সবাই মিলে শিখি, যার ইমপ্লিমেন্টিং পার্টনার ছিল আরটিআই ইন্টারন্যাশনাল। এ কর্মসূচিতে স্বল্পসংখ্যক বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার পরিকল্পনা ছিল।

সামগ্রিকভাবে ২০২৫ সালে ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ উদ্বেগজনক, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা খাতে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে এই তহবিল বন্ধের চাপ নিতে সংকটে পড়বে। সাধারণভাবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে এমন চাপ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নতুন সংকট হতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আসন্ন সংকটকে মেনে নিতে হবে

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও মানবিক সহায়তা খাতের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সারা দেশে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সংকটে পড়েছে।

প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে অনেক। কর্মসংস্থানের সংকট সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ইউএসএআইডির সহযোগিতায় পরিচালিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়ন অন্যতম। এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়ার ফলে অনেক কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন, যার সংখ্যা লাখের কাছাকাছি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষাকর্মী, সমাজকর্মী এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা এই সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অনুদানের ওপর নির্ভরশীল কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই পরিকল্পনা করা জরুরি।

সরকারের পরিকল্পনার অভাব দেখা যাচ্ছে। ইউএসএআইডির সহায়তা কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষত, যেসব অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো ইউএসএআইডির সহায়তায় গড়ে উঠেছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা অনিশ্চিত। অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল এবং মানবিক সহায়তা প্রকল্পগুলো পরিচালনার জন্য বিকল্প অর্থায়নের কোনো ঘোষণা আসেনি।

বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে দেরি হলে সমস্যা হতে পারে। স্বাস্থ্য খাতের সংকটের জন্য যক্ষ্মা, পুষ্টিহীনতা, মাতৃস্বাস্থ্য এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হলে স্বাস্থ্যসেবার অবনতি ঘটবে। শিক্ষা খাতে ধাক্কা লাগবে। ‘এসো শিখি’ কর্মসূচি ও অন্যান্য শিক্ষাসহায়তা কার্যক্রমে অর্থায়ন কমে যাওয়ায় দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে। নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচিতে বিঘ্ন ঘটবে। বিভিন্ন নারীকেন্দ্রিক উদ্যোগ যেমন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমে যাবে। কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি দেখা যাবে। কৃষি খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ইউএসএআইডি গুরুত্বপূর্ণ অনুদান দিত। এর সংকোচন হলে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া আমরা এনজিও খাতের বড় একটা সংকট দেখব। অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ইউএসএআইডির অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। ফলে তারা এখন বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে, যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইউএসআইডির উপস্থিতি ছিল, যা এখন বন্ধ।

সম্ভাব্য সমাধান ও সুপারিশ

মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রে স্যাকস মনে করেন, যেকোনো দেশকে অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হতে হলে তাকে বিনিয়োগ ও উৎপাদনদক্ষতা বাড়াতে হবে। বর্তমান এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, এনজিও ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। ইউএসএআইডির অর্থায়ন সংকুচিত হওয়ায় সরকারকে বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বাড়তি বরাদ্দ দিতে হবে। এতে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর স্থায়িত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিকল্প উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সন্ধান করতে হবে দ্রুত। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তহবিল সংগ্রহের কৌশল নিতে হবে। স্থানীয় এনজিও ও করপোরেট সংস্থার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এনজিও ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অর্থায়ন ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো চালু রাখা যেতে পারে।

স্বল্পমেয়াদি প্রকল্পগুলোর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে যেতে হবে। ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক অনুদান থেকে নিজেদের উৎপাদনমুখী বিনিয়োগে স্থানান্তর করেছে, বাংলাদেশকেও এই মডেলে যেতে হবে। বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগোতে হচ্ছে। ফলে অনুদানের পরিবর্তে স্বল্প সুদে ঋণভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগিতার দিকে যেতে হতে পারে। ইউএসএআইডির স্লোগান যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পক্ষ থেকে লেখা আবারও হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ভবিষ্যতে অন্যভাবে দেখা যাবে। সেই পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে নিজের পরিকল্পনা অনুসারে এগোতে হবে।

জাহিদ হোসাইন খান গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাবেক কর্মী; ই-মেইল: [email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র তহব ল ইউএসএআইড র স ইমপ ল ম ন ট ২০২৫ স ল র ২০২৪ স ল র বর দ দ ছ ল ন র জন য প র টন র বর দ দ র ব শ ষ কর সহয গ ত ব সরক র প রকল প র র জন অন দ ন এনজ ও হওয় র র ওপর ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটে ভর্তি: মাইগ্রেশন, বিষয় ও প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ প্রকাশ
  • হেলথ টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি, অপেক্ষমাণ থেকে তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে