ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় নারী-শিশুসহ ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে পশ্চিম তীরেই প্রাণ গেছে ২২ জনের। বরাবরের মতোই দখলদার বাহিনী বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতি সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে দখলদাররা উপেক্ষা করেছে।

একজন হামাস নেতাকে হত্যা করতে প্রয়োজনে তারা ১০০ সাধারণ মানুষকে হত্যা করবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সংসদ বিচারক নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে আইনও পাস করেছে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ইসরায়েলের নাগরিকরা।   

ইসরায়েলি হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে অন্তত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন। ইসরায়েলের বর্বর আচরণ বন্ধ করে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।  

আলজাজিরা জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন। এতে করে গত এক দিনে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় নিহতের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, গাজায় হাজার হাজার মানুষ তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি। মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য খাদ্য মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

এদিকে মিসরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। আকস্মিক এই হামলায় নিহত হয় সাত শতাধিক মানুষ।

একদিকে হামলা অন্যদিকে জোর করে বসতি স্থাপন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা। পবিত্র রমজানে বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। প্রায়ই তারা দখলদার ইসরায়েলিদের হামলার শিকার হয়েছে। বাড়িঘর থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর জোর করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।  

গাজায় দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়েছে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তারা বলছে, সহায়তা তহবিল কমানো হলে গাজায় মানুষের জীবন খাদ্যাভাবে বিপন্ন হবে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছরের তুলনায় এবার সহায়তা তহবিল ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে।   

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা ইসরায়েলের সামরিক মতবাদের অংশ। হামলার ভয়ে সাহায্য সংস্থা ও কর্মীরা ফিলিস্তিনি ছিটমহল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।  

এদিকে লেবানন থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে ইসরায়েলে আঘাত হানে দুটি রকেট। এতে ইসরায়েল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈরুতে বিমান হামলার হুমকি দেন এবং একটু পরই বিমান হামলা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল লেবাননে জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে। গত নভেম্বরে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো হামলা করা হলো।   

ইয়েমেনে হুতিদের ৪০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সানাসহ ইয়েমেনজুড়ে হুতিদের এসব ঘাঁটি বিদ্যমান। হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা অগ্রহণযোগ্য। এটা যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন। লেবাননের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, বৈরুতে হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখল ইসরায়েল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল দখলদ র ল ব নন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান

ইসরায়েলের হামলার জবাবে নতুন করে ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর জেরুজালেম ও তেল আবিবে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে একজন নিহত এবং প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত নয়টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের হারেৎজ সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি উঁচু ভবনে আঘাত হানায় ভবনটির নিচের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল আবিবের শহরতলির রামাত গানেও নয়টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।

ইরান দেড় শতাধিক মিসাইল ছুঁড়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদপত্রটি। এদিকে কিছুক্ষণ আগে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে) জেরুজালেমের আকাশে ফের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের একটি নতুন ঢেউ ইসরায়েলের দিকে এগিয়ে আসছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের দিকে আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। আইডিএফ এর আগে নতুন করে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল এবং বলেছিল যে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলায় হতাহতের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। নৃশংস এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছে। দখলদার বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান