টানা সিয়াম সাধনার পর এসেছে খুশির ঈদ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারতজুড়ে উৎসবের আবহে এই ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। 

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিনেও রাজনীতির বাইরে থাকতে পারলে না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ঈদের জামাত থেকে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের। নাম না করে বিজেপিকে ‘দাঙ্গাকারী দল’ বলেও আক্রমণ করেন তিনি। যদিও রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমাজে আশা, সম্প্রীতি এবং দয়ার চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জানিয়েছেন ঈদের শুভেচ্ছা।

আরো পড়ুন:

নাগপুর দাঙ্গা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মমতা

বিজেপির আয়ু আর ২-৩ বছর: মমতা

আসাম, মণিপুর, বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিসহ ভারতের রাজ্যে রাজ্যে সোমবার সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ দেখা যায়।

সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় রাজধানী নয়াদিল্লিতে, জামা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ সমবেত হন। 

নয়াদিল্লির ফতেহপুরী মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসলিম সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ স্মৃতিসৌধে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান তারা।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে, এক্স-এর একটি টুইটে ভারতের জাতীয় রাজধানীর পুলিশকে ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের সময় বিস্ফোরণের সতর্কবার্তা দিয়ে সতর্ক থাকার জন্য হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। টুইটে বলা হয়েছিল, “কিছু অবৈধ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি মুসলিম চাঁদনী চক, জামা মসজিদ, জাহাঙ্গীরপুরীতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বা বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।”  ফলে সকাল থেকেই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

অন্যদিকে কলকাতায় ঈদের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় রেড রোডে। প্রতিবছরের মতো সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের জামাত থেকে বাংলার সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দেন তিনি। নাম না করে বিজেপিকে ‘দাঙ্গাকারী দল’ বলেও আক্রমণ শানান তিনি। 

মমতা বলেন, “একটা বিশেষ দল বাংলায় দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করে। ওদের একটাই আওয়াজ দাঙ্গা করো, কিন্তু এখানে আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই ভাই ভাই। এখানে বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করব না।”

বাম-বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা একসঙ্গে টিকিট কেটে ওখানে (লন্ডনে) গিয়ে ধর্মের রাজনীতি করতে চেয়েছিল। এখানেও নতুন করে আবার দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করবে। প্ররোচণায় পা দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনাদের সঙ্গে দিদি রয়েছে। বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করব না।”

এদিকে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে জুমা মসজিদ এবং মাহিম দরগার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোতে বিশাল জামাত দেখা গেছে। মুম্বাইতেও সুষ্ঠুভাবে ঈদ আয়োজনে কঠোর নিরাপত্তার বলযয়ে শহরকে মুড়ে ফেলে মুম্বাই পুলিশ। 

রাজস্থানের আজমিরি শরীফে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর মাজারে প্রার্থনা এবং উৎসব উদযাপনের জন্য সমবেত হন লক্ষাধিক মুসল্লি। 

সোমবার ঈদুর ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সমাজে আশা, সম্প্রীতি এবং দয়ার চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী মোদি তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে সকলকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। 

তিনি লিখেছেন, “ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। এই উৎসব আমাদের সমাজে আশা, সম্প্রীতি এবং দয়ার চেতনা বৃদ্ধি করুক। আপনার সকল প্রচেষ্টায় আনন্দ এবং সাফল্য আসুক। ঈদ মোবারক!”

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, জোর দিয়ে বলেছেন, এই উৎসব ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে শক্তিশালী করে এবং করুণা ও দানশীলতাকে উৎসাহিত করে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম  এক্স-এ রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, “ঈদুল ফিতরের শুভ উপলক্ষে সকল দেশবাসীকে, বিশেষ করে মুসলিম ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা। এই উৎসব ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে এবং করুণা ও দানশীলতা গ্রহণের বার্তা দেয়। আমি কামনা করি যে, এই উৎসব সকলের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সুখ বয়ে আনুক এবং সকলের হৃদয়ে কল্যাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেতনাকে শক্তিশালী করুক।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার শুভেচ্ছা বার্তা শেয়ার করে বলেছেন, “ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। এই উৎসব সকলের জন্য সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। আশা করি, এই দিনটি সমাজের সর্বত্র সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে। ঈদ মোবারক!”

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কার্যালয় থেকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ঈদুল ফিতর আনন্দ ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে। এই আনন্দের উৎসব সামাজিক ঐক্যকে শক্তিশালী করে এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে। এই উৎসব শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়। এই উৎসবে সকলের উচিত সম্প্রীতি ও সামাজিক সম্প্রীতি আরো জোরদার করার অঙ্গীকার নেওয়া।”

এদিকে সোমবার ঈদের দিনেও গরমের দাপট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের মতো পূর্ব ও মধ্য ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে। রাজ্যগুলোর অধিকাংশ জেলার তাপমাত্রা মোটামুটি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যেই থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। হিট ওয়েভের সতর্কবার্তা দিয়ে আবহাওয়া অফিস বলছে, একাধিক জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারে।

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ ম খ যমন ত র ই উৎসব উপলক ষ র জন য র র জন মন ত র র জন ত স মব র সকল র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব 

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সমবায় খাতকে আধুনিক ও গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, সঞ্চয় ও ঋণদান এবং কুটিরশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”

আরো পড়ুন:

মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন

নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

শনিবার (১ নভেম্বর) ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারো ১ নভেম্বর, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি সকল সমবায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “দেশ ও জনগণের উন্নয়নে গৃহীত যেকোনো কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত অপরিহার্য। সমবায়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ কাজ আমরা অনায়াসে করতে পারি। সমবায় সমিতিগুলো শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয় বরং সমাজের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় আন্দোলনের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম।”

তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, সমবায়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য ও সমতায় আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি নতুন বাংলাদেশ।”

প্রধান উপদেষ্টা ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। খবর বাসসের। 

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ণিল আয়োজনে ১৯তম সিকৃবি দিবস উদযাপন
  • জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 
  • মিথ্যা প্রচার দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে: মির্জা ফখরুল
  • বাংলাদেশের শত্রুতারা আবার মাথা মাথাচারা দিয়ে উঠতে শুরু করেছে: মির্জা ফখরুল
  • বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেলেন রাইজিংবিডির রুমন চক্রবর্তী
  • ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা
  • ইসমাইল হোসেন (মুরুব্বী) এর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া 
  • যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে বর্ণাঢ্য র‌্যালি
  • সরকারে এলে ৫০ লাখ নারীকে ফ্যামিলি কার্ড দিবে বিএনপি : সজল
  • সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব