রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া এক স্কুলশিক্ষক ঈদের নামাজ পড়তে বাড়ি ফিরলে ঈদগাহেই তাঁর ওপর হামলা হয়। ওই শিক্ষকের অভিযোগ, তাঁকে নাগালে না পেয়ে হামলাকারীরা তাঁর পক্ষের লোকজনের চারটি বাড়ি ও একটি দোকানঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। এ ছাড়া তাঁর পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া অপরপক্ষের আরও দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে।

এই শিক্ষকের নাম এ এস এম মনোয়ার হোসেন (৪৬)। তিনি নন্দনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর অভিযোগ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য আনারুল ইসলাম ওরফে জুম্মা হাজির দুই ছেলের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে আনারুলের দাবি, তাঁর ছেলেই প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী তাঁদের ধাওয়া করেছে। এ হামলায় আহত হয়েছেন মনোয়ার হোসেনের বড় ভাই জাকির হোসেন (৫২), চাচা মকবুল হোসেন (৫৫), মকবুল হোসেনের আত্মীয় ফজলুল হক (৬০) ও ফজলুল হকের ভাতিজা মোহাম্মদ রকসি (৩৫)।

হামলাকারীরা মনোয়ার হোসেনের বাড়ি ছাড়াও রাশেদুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া ও মকবুল হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। তারা মকবুল হোসেনের বাড়িতে লুটপাট করেছে এবং নন্দনপুর বাজারে রাশেদুল ইসলামের সিমেন্টের দোকান ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়া তারা মকবুল হোসেনের বাড়িতে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় নন্দনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বিএনপি নেতা আনারুল ইসলাম ওরফে জুম্মা হাজির ভাই। তাঁকে আওয়ামী লীগের সময়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষক এ এস এম মনোয়ার হোসেনকে। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মনোয়ার হোসেন আত্মগোপনে চলে যান। ঈদ উদ্‌যাপন করার জন্য রোববার বাড়ি ফেরেন মনোয়ার। রাতেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। সকালে নামাজ পড়তে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির লোকজন তাঁর ওপরে হামলার চেষ্টা করেন।

এই হামলা থেকে বাঁচতে পারলেও মনোয়ার হোসেনের লোকজন আহত হন এবং তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। শিক্ষক মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তিনি কোনোরকমে বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন, কিন্তু বাড়ির জানালা-দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে। তাঁর সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। মনোয়ার দাবি করেন, বরাবরই তাঁর পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। বিএনপি নেতা আনারুল তাঁর চাচাতো ভাই। মনোয়ার জানান, তিনি বিএনপি পরিবারের সন্তান। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময়ে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে তাঁকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দিতে হয়েছে।

এদিকে আনারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখেন সব আওয়ামী লীগের লোক এক জায়গায় হয়েছে। তাঁরা তো এখন কেউ আর আওয়ামী লীগের কথা স্বীকার করছেন না। তাঁরা রাতারাতি বিএনপি হয়ে গেছেন আবার। তাঁরা (আওয়ামী লীগের লোকজন) হামলা করার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করছিল। আগেই বলাবলি করছিল ঈদগাহেই আজ কিছু একটা হবে।

আনারুল আরও বলেন, তিনি নামাজ শেষ করে কোলাকুলি করছিলেন। তখনই হামলার ঘটনা ঘটে। ওরা (মনোয়ার হোসেনের লোকজন) প্রথমে তাঁর (আনারুল ইসলাম) ছেলে তামিমকে উসকানিমূলক কথা বলেন। তারপর আরেক ছেলে হামিদের মাথায় বাড়ি দেয়। ভাতিজা রাফিদ ইসলাম মুন্নাকেও মারধর করে। এরপর এলাকার লোকজন তাঁদের তাড়ানি দিয়েছে। একটা দোকান ভাঙচুর করেছে। তবে কারও বাড়িঘর ভাঙচুর করার কথা শুনেননি বলে জানান আনারুল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নন্দনপুরের ঘটনাটি বিএনপি নেতা আনারুল ইসলাম উরফে জুম্মা হাজির পারিবারিক ঘটনা। এটা দীর্ঘদিনের বিরোধের জের। ওখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে কবির হোসেন বলেন, সেখানে হালকা-পাতলা একটা ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মকব ল হ স ন র র ল কজন মন য় র করছ ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ